৭৪ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ কমেছে তিন মাসে

দেশের ব্যাংকগুলোর ডলার ব্যবহারের সীমা কমিয়ে দিয়েছে বেশির ভাগ ব্যাংক ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বিদেশি ঋণে। তাতে গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বিদেশি ঋণ ৭৪ কোটি মার্কিন ডলার কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ কমেছে, তার মধ্যে সরকারি খাতের ঋণ কমেছে ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর বেসরকারি খাতের ঋণ কমেছে ৫২ কোটি ২০ লাখ ডলার। বেসরকারি খাতের ঋণের মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিটই কমেছে ৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যখন কোনো আমদানিকারকের পক্ষে বিদেশি ব্যাংক আমদানি মূল্য শোধ করে দেয়। আর ছয় মাসে আমদানিকারক সুদসহ তা পরিশোধ করে তাকেই বায়ার্স ক্রেডিট বলা হয়।

দেশের ব্যাংকগুলো তার বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে থাকা সীমা থেকে এই ঋণ নেয়। তবে ডলারসংকটের কারণে দেশের ব্যাংকগুলোর ডলারের সীমা কমিয়ে দিয়েছে বিদেশি অনেক ব্যাংক। আবার মাসের পর মাস আমদানি দায়ের অর্থ না পেয়ে অনেক বিদেশি ব্যাংক এ দেশের কিছু ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এ কারণেও বায়ার্স ক্রেডিট উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৬৩ কোটি ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১২২ টাকা হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকায়। এর মধ্যে সরকার ও সরকারি দপ্তর মিলিয়ে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৪২১ কোটি ডলার। আর বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৯৪২ কোটি ডলার। একই বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০ হাজার ৪৩৭ কোটি ডলার। সেই হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ কমেছে ৭৪ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে বিদেশ থেকে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৪৪২ কোটি ডলার। আর বেসরকারি খাতের ঋণ ছিল ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ডলার।

গত ডিসেম্বরে মোট ঋণের মধ্যে বিদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৯ কোটি ডলার। আর সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ এসেছে ১ হাজার ২৯৫ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বিদেশ থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩০০ কোটি ডলার বা প্রায় ৩ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাড়ে ১৫ বছরে সরকার প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ করে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর আগে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দেশে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলার।

আরএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নারায়ণগঞ্জ থেকে ‘মার্চ ফর ইউনূস’ কর্মসূচির ঘোষণা Apr 14, 2025
img
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে আবারও বাংলাদেশ, আলোচনায় পাসপোর্ট ইস্যু Apr 14, 2025
img
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, প্রাণ গেল এক যুবকের Apr 14, 2025
img
রিয়ালের কঠিন জয়, লাল কার্ড দেখলেন এমবাপ্পে Apr 14, 2025
img
মহাখালীতে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বে সড়ক অবরোধ Apr 14, 2025
img
বৈশাখী মেলার প্রস্তুতি পরিদর্শনে হাতিরঝিলে রাজউক চেয়ারম্যান Apr 14, 2025
img
জাতীয় স্টেডিয়াম পরিদর্শনে এএফসি প্রতিনিধি, সময়সীমা ২২ মে Apr 14, 2025
img
পাকিস্তানের জাতীয় দিবস উদযাপনে জামায়াতের অংশগ্রহণ Apr 14, 2025
img
কুয়েটে হল খোলার দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি Apr 14, 2025
img
ওআইসির শ্রম কেন্দ্রের চুক্তিতে স্বাক্ষর করল বাংলাদেশ Apr 14, 2025