‘যারা আমার ছেলেকে যুদ্ধে পাঠাইছে তাদের বিচার চাই’

পরিবারে সচ্ছলতা আনতে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের তরুণ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস— যুদ্ধের ময়দানে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুর সংবাদে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে হোসেনপুর গ্রামে আকরামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একতলা বাড়িতে ভিড় করেছেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা। ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছেন আকরামের মা মবিনা বেগম। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন, আবার জেগে উঠে বিলাপ করছেন। ছেলের সর্বশেষ মোবাইল ফোন কথোপকথন মনে করে তিনি বলছিলেন, ‘আইচ্ছা আম্মা, ভালো থাইকো... পরে ফোন দিমুনে…’ এই বাক্যই ছিল মায়ের সঙ্গে আকরামের শেষ কথা।

আকরামের বাবা মোরশেদ মিয়া পেশায় একজন কৃষক। সংসারের ভার বহন করছিলেন একাই, কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছিল না। ছেলেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ১০ লাখ টাকা দেনা করে আকরামকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়, উদ্দেশ্য ছিল পোল্যান্ডে ভালো চাকরি। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন।

পরিবারের অভিযোগ, আকরাম রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রথমে একটি চায়না কোম্পানিতে কাজ পান। তবে মাত্র চার মাস কাজ করার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় বেতন। এরপর ওই কোম্পানির সহায়তায় বা প্রতারণায় আকরামকে তুলে দেওয়া হয় রুশ সেনাবাহিনীর হাতে। তাকে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হন। আড়াই মাস ইউক্রেন সীমান্তবর্তী এলাকায় থেকে জীবন-মরণ লড়াইয়ের পর গত ১৪ এপ্রিল ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় নিহত হন আকরাম।

আকরামের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে বলে গেছিল ভয় করে, ড্রোন আসে। আমি বারণ করছি। সে বলে— আর ফেরার রাস্তা নাই।

ছেলের মরদেহ একবার চোখে দেখার আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি শুধু একবার আমার বাবারে দেখতে চাই। যারা তাকে যুদ্ধে পাঠাইছে আমি তাদের বিচার চাই।

বাবা মোরশেদ মিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, আমার ছেলেকে পোল্যান্ডের কথা বলে দালালরা রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। সেই দালালেরাই আমার ছেলেকে মেরেছে। এখন দেনা কীভাবে শোধ করব, সংসারই বা কীভাবে চালাব বুঝতেছি না।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দালালদের কারণে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে।

বাকের আহমেদ খান নামে এক প্রতিবেশী বলেন, সরকারের উচিত এই ধরনের প্রতারণাকারী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, নয়তো আরও অনেক আকরাম এভাবে প্রাণ হারাবে।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফে মোহাম্মদ জানান, আকরামের মরদেহ ফেরত আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। মরদেহ কোথায় রয়েছে, সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।


আরএম/এসএন        

Share this news on: