ইসরায়েলি জনগণের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান, নেতানিয়াহুর যুদ্ধপিয়াসী মনোভাব

গাজায় ফিলিস্তিনিদের রক্তে ভেজা ভূমি ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত জনপদ দেখেও যুদ্ধ বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নেওয়ার পরও তিনি গাজায় হামলা চালানোকে ‘অপরিহার্য’ বলেই দাবি করছেন।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার ভিডিও বক্তৃতায় বলেন, বিজয় না আসা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। তিনি আরও জানান, প্রতিবেশী ইরান যেন কখনো পারমাণবিক অস্ত্র না পায়, তা নিশ্চিত করতেও তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই বর্বরতায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন—যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

নেতানিয়াহু বলেন, হামাস যদি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তবে গাজায় বোমাবর্ষণই হবে উপায়। ইসরায়েলের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, গাজা যেন অস্ত্রমুক্ত হয়, তবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। এই প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানায় হামাস।

ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, যদি আমরা হামাসের দাবি মেনে নিই, তাহলে আমাদের বীর সেনাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে।

এর পাশাপাশি তিনি ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শনিবারই রোমে এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে এক বৈঠক হয়। নেতানিয়াহু বলেন, আমি প্রতিজ্ঞা করছি—ইরান যেন কখনোই পরমাণু অস্ত্র না পায়।

শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আগের ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় ৯০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রাতেই আরও ১৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১১ জন খান ইউনিসে ও ৪ জন রাফায়। নিহতদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছেন। বিশেষ করে মুয়াসি এলাকায় হামলায় অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, যেখানে ইসরায়েল আগেই ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করেছিল।

এই পরিস্থিতির মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শনিবার উত্তর গাজায় তাদের এক সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির পর প্রথম কোনো সেনার মৃত্যুর ঘটনা এটি। ওই অঞ্চলে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড হামলার দায় স্বীকার করেছে।

ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। তেল আবিবে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জিম্মি অবস্থায় আটক থেকে মুক্ত হওয়া ওমের শেম তোভ বলেন, তাদের (জিম্মি) এখনই ফেরত আনুন। যুদ্ধ থামাতে হলে তাই করুন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের হাজার হাজার স্বাক্ষরিত চিঠিও যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এক মাস আগে চ্যানেল ১২ নিউজ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিক মনে করেন, যুদ্ধ থামিয়ে হলেও জিম্মিদের ফেরত আনা উচিত। কিন্তু এই গণচাহিদা উপেক্ষা করেই নেতানিয়াহু সরকার গাজায় আরও রক্তপাত চালিয়ে যাওয়ার অবস্থান নিয়েছে।

আরএ

Share this news on: