জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার অভিযোগ করে বলেন, সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নে বিএনপি এক ধরনের ‘চালাকি’ করতে চাইছে। তিনি বলেন, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে সীমানা পুনঃনির্ধারণের যে রাজনীতি হয়েছে, সেটি একটি মৌলিক প্রশ্ন হিসেবে সামনে আসছে। বিশেষ করে, বিএনপি গণভোটের বিষয়টি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করলেও সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে তারা গণভোটকে প্রাধান্য দিতে চায় না। অথচ সংবিধান সংশোধনের মতো মৌলিক বিষয়ে জনগণের সম্মতি গ্রহণ করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন তুষার।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দল, সরকার ও রাষ্ট্র একাকার হয়ে গেছে, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের প্রধানই রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছেন। এই ‘ডিস্টোপিয়ান’ অবস্থান থেকে মুক্তির জন্য একটি ‘ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড’ অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজন আছে। ইউরোপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে শুধুমাত্র পাঁচ বছর পরপর ভোট নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোতে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও এর অংশ।
তুষার আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানকে ‘জাতীয় দলিল’ না বানিয়ে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শিক নথিতে পরিণত করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে আওয়ামী লীগের চার মূলনীতি সংযোজন, পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটির পরিবর্তন এবং দলীয় মতাদর্শকে মূলনীতিতে পরিণত করায় রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, “মূলনীতি আসলে জনগণের মৌলিক অধিকার নয় বরং একটি দলের রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র। সংবিধানে মৌলিক অধিকারের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল, যেমনটা আমেরিকার ‘বিল অব রাইটস’-এ দেখা যায়। এখানে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন কখনোই করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই যে সংবিধান সংশোধন করতে গেলে দুই হাউজের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন তো লাগবেই, পাশাপাশি জনগণের সম্মতির জন্য গণভোট বাধ্যতামূলক করতে হবে। কারণ জনগণ যদি কাউকে ভোট দেয়, সেটি মানে নয় যে তারা সবকিছুতে অন্ধ সমর্থন দিচ্ছে।”
তুষার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত চারটি নীতিকে (সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র) সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে একটি ধর্মনিরপেক্ষ কিন্তু ধর্মসহনশীল কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা জরুরি, যাতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও দেশের অবস্থান গ্রহণযোগ্য হয় এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও নিরাপদ বোধ করে।
তিনি উল্লেখ করেন, “বিএনপি এখন বলছে তারা সংস্কারপন্থী, কিন্তু আসলে তারা সংস্কারকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করছে। পঞ্চদশ সংশোধনী আগের অবস্থায় ফেরত নেওয়ার কথা বললেও, তারা এক্ষেত্রে নিজেদের সুবিধামতো ইতিহাস পুনর্লিখন করতে চায়।”
শেষে সারোয়ার তুষার বলেন, “রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করা হলে প্রকৃত গণতন্ত্র কায়েম হবে না। এ জন্য একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার বিকল্প নেই।”
আরএম/টিএ