জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রায় যুদ্ধের রূপ ধারণ করে ফেলেছে ইতোমধ্যে। দুই সপ্তাহ ধরে চলা হুমকি-ধমকির পর গত ৬ মে মধ্যরাতে বাস্তবিকই পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরসহ আশেপাশের কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দিয়েছে ভারত। এ হামলার কঠিন জবাব দিতে উঠেপড়ে লেগেছে পাকিস্তানও। দুদেশ থেকেই ভেসে আসছে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর।
এ অবস্থায় ভয়াবহ যুদ্ধের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে। ফলে, অর্থনীতিতে বড় ধরনের খেসারত দিতে হচ্ছে ভারতকে।
শুক্রবার (৯ মে) বড় ধরনের ধস লক্ষ্য করা গেছে ভারতের শেয়ারবাজারে। প্রতিরক্ষা খাতের শেয়ারগুলো বাদে প্রায় সব খাতেই ছিল বিক্রির চাপ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট বলছে, অপারেশন সিঁদুরের জের ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হওয়ায় এমন ধস নেমেছে ভারতের শেয়ারবাজারে। এদিন বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ভারতীয় শেয়ার বাজারের সেনসেক্স ৮৮০ পয়েন্ট কমে ৭৯ হাজার ৪৫৪-এ দাঁড়ায়, আর নিফটি সামান্য ব্যবধানে ২৪ হাজারের ওপরে অবস্থান ধরে রাখে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি মূলধনী শেয়ারগুলোর পতন ছিল আরও তীব্র; কিছু ক্ষেত্রে তা নেমে গেছে দুই শতাংশ পর্যন্ত।
ভারতের শেয়ারবাজারে অস্থিরতার সূচক ‘ইন্ডিয়া ভিক্স’ ৬ শতাংশ বেড়ে ২২.২৭-এ পৌঁছায়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাড়তে থাকা উৎকণ্ঠারই ইঙ্গিত দিচ্ছে এই চিত্র।
বিশ্লেষকদের মতে, শুক্রবার সকালেই ভারতীয় শেয়ারবাজারের এমন পতনের কারণ পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ থেকে পশ্চিম সীমান্তে ড্রোন ও গোলাবারুদের মাধ্যমে হামলার খবর। তবে, বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, উত্তেজনার মাত্রা এখনো বাজারে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি।
এক বিনিয়োগকারী রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ সব পজিশন বন্ধ করে দিচ্ছি। ছুটির দিনে আরও উত্তেজনা তৈরি হলে আগামী সপ্তাহে বাজারে আরও বড় ধস নামতে পারে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী অম্বরীশ বালিগা বলেছেন, এই উত্তেজনার পরিণতি বাজার আগে থেকে ঠিকমতো মূল্যায়ন করতে পারেনি। তাই শুক্রবারের পতন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
তবে, বাজারজুড়ে বিক্রির চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের শেয়ারগুলো হাঁটছে উল্টোপথে। ভারত ইলেকট্রনিকস ও হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস-এর শেয়ার ২ থেকে ৩ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশীয় প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও নীতিগত সমর্থনের প্রত্যাশায় এই শেয়ারগুলোতে আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। শুক্রবার নিফটি ডিফেন্স সূচক ছিল একমাত্র লাভের মুখে থাকা খাত; বাকি ১৩টি খাতেই ক্ষতির হার ছিল লক্ষণীয়।
আরএম