চেরনোবিল:মৃত্যুপুরীতে জীবনের সন্ধান

পারমানবিক বিপর্যয়ের কবলে পড়া ইউক্রেনের চেরনোবিল একটি বিদ্রুপের নাম। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন শো’ এ শহরটিকে আবারো মানুষের সামনে এনেছে। এক সময়ের জনবহুল শহর কিভাবে এমন নির্জন আর ভুতুড়ে শহরে পরিণত হল সে বিষয়টি নিশ্চয়ই অনেকের জানা। প্রায় ১ হাজার বর্গকিলোমিটারের এ শহরটিতে এখন নতুন করে প্রাণ ফিরছে তবে তা মানুষের নয়, পশুদের। সেখানে এখন বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর দেখা মিলছে।  

উত্তর ইউক্রেনের এই উষ্ণ বনভূমিতে এখন নেকড়ে, বন্য শুকর এবং ভল্লুকরা ফিরে এসেছে। একটি বিষয় স্পস্ট এসব প্রাণীর উপস্থিতি মানে হলো সবুজ গাছপালার আবির্ভাব। মানে চেরনোবিল এখন সুবজ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। ১৯৮৬ সালের ওই দুর্যোগের পর তিন বছরের মাথায় সেখানে সুবজ গাছ-পালা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।  

প্রায় ৩২ বছর আগে ঘটে যাওয়া সবথেকে মারাত্মক পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরপরই এই এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়া হয়। তবে বসবাসকারী মানুষদের সরিয়ে নেয়া গেলেও অন্যান্য যেসব বন্য জীব-জন্তু ছিলো, তাদের সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এখন এই চেরনোবিলের পরিত্যক্ত এলাকাটি জীববিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রতি বছর অনেক গবেষকই এখানে আসছেন তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবগ্রস্থ প্রাণীকুল নিয়ে গবেষণা করতে।

সাম্প্রতিক সময়ের ওই টেলিভিশন শো’টির মারফত জানা যায়, সেখানে ১৯৯৮ সালের দিকে মুক্ত করা এক বিশেষ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় ঘোড়া বংশ বৃদ্ধি করেছে। যেহেতু মানুষের অস্তিত্ব নেই তাই সেখানটি এসব প্রাণীর জন্য স্বর্গরাজ্য হবে এমনটি ধরে নিয়ে পেরজলস্কি নামের ওই বিশেষ প্রজাতির ঘোড়াকে ছাড়া হয়েছিল। শুধু কি ঘোড়া অন্য অনেক পশু-পাখির জন্য চেরনোবিল জায়গাটি ঝামেলাহীন। অনেকে এটাকে এই দুর্ঘটনার উজ্জ্বল দিক হিসেবেও বর্ণনা করে থাকেন। কারণ একদিকে জায়গাটি মানুষের বসবাসের অনুপযোগী, কিন্তু অন্যদিকে পশুপাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে এটি এক মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। সেই সাথে এখানে এদের বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করা যায় গবেষকদের করা গবেষণায়।

২০১৬ সালের একটি টেলিভিশন প্রতিবেদনে সেখানকার বন্যপ্রাণীদের চালানো একটি জরিপ তুলে ধরা হয়। তাদের ক্যামেরায় সে সময় ১টি বাইসন, ২১টি বন্য শূকর, ৯টি ব্যাজার, ২৬টি ধূসর নেকড়ে, ১০টি শেয়াল সহ বিভিন্ন ধরণের পাখি প্রজাতি, ঘোড়া ইত্যাদির সরব উপস্থিতি ধরা পড়ে। তবে গবেষক ও জীববিজ্ঞানীদের অভিমত বন্যপ্রাণীদের সরব ‍উপস্থিতি মানে এই নয় যে, তারা সবাই তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব মুক্ত। এই এলাকায় কিছু পরিমাণ প্রজাপতি, ভোমরা, ফড়িং, ঘাসফড়িং এবং মাকড়সা বর্তমান আছে। কিন্তু তেজস্ক্রিয়তার ফলে এসব প্রজাতিতে মিউটশনের প্রভাব দেখা গিয়েছে স্বাভাবিকের থেকে বেশি। তবে গবেষণায় এটিও দেখা যায় যে, চেরনোবিল বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা ঠিক ততটা শক্তিশালী নয় যাতে বন্যপ্রাণীদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

চেরনোবিলে যে একেবারে জনমানুষ শুন্য তা কিন্তু নয়। বিস্ফোরণের পরপরই যারা অন্যত্র চলে গিয়েছিলো তাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের অনেকে কয়েক বছর পর সেখানে ফিরে আসেন। যারা সুন্দর ওই শহরটিতে জন্ম নিয়েছেন, বেড়ে উঠেছেন, তাদের কাছে চেরনোবিল ছিলো আবেগের জায়গা। তাই শেষ জীবনে সেখানেই মৃত্যুর আকাঙ্খা তাদের ফিরিয়ে আনে। আবার অনেকে আসেন খন্ডকালীন অতিথি হয়ে-গবেষণার কাজে। আবার কেউ বেড়াতে কিংবা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে সেখানে যান স্বল্প সময়ের জন্য। তবে এটা সত্য যে, পৃথিবীর বুকে চেরনোবিল বিস্ফোরণ ঘটনা ছিল মনুষ্যসৃষ্ট একটি মহাদুর্যোগ। তবে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের তুলনায় তা ছিলো আসলেই কম ধ্বংসাত্মক।

 

টাইমস/এমএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নেতানিয়াহু-হানিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন আইসিসিতে May 21, 2024
img
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা May 21, 2024
img
১৫৬ উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু May 21, 2024
img
অন্তঃসত্ত্বা দীপিকাকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে রণবীর, দেখা মিললো বেবি বাম্পের May 20, 2024
img
ইরানে ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, মঙ্গলবার রাইসিসহ নিহতদের দাফন May 20, 2024
img
ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবরে বেড়েছে তেলের দাম May 20, 2024
img
বঙ্গবন্ধু শান্তি পদক দেবে সরকার, পুরস্কার স্বর্ণ পদক ও কোটি টাকা May 20, 2024
img
ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক May 20, 2024
img
কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর May 20, 2024
img
রাইসির মৃত্যুতে ইসরায়েলি নেতাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ May 20, 2024