দক্ষিণী অভিনেতা দুলকার সালমান অভিনীত অর্থনৈতিক অপরাধভিত্তিক সিনেমা ‘লাকি ভাস্কর’। গত বছর মুক্তি পায় সিনেমাটি। বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ‘লাকি ভাস্কর’ পরিচালনা করেছেন ভেঙ্কি আটলুরি।
সিনেমাটি একটি মধ্যবিত্ত ব্যাংক কর্মচারী ভাস্করের (দুলকার সালমান) জীবন নিয়ে, যিনি তার পরিবারের আর্থিক সমস্যার সমাধানে অবৈধ পথে পা বাড়ান। তার বুদ্ধি এবং চাতুর্যের মাধ্যমে যদিও তিনি সংকট কাটানোর চেষ্টা করেন, তবে অতিরিক্ত লোভ তাকে গভীর ফাঁদে ফেলে দেয়।
গল্পের প্রেক্ষাপট ১৯৯০-এর দশকের মুম্বাইকে ঘিরে। নব্বইয়ের দশকে গড়ে ওঠা এই গল্পটি ব্যাংক এবং শেয়ার বাজারের প্রতারণা ও অর্থ পাচারের ঘটনাগুলো ফুটিয়ে তুলেছে। এই গল্পে হর্ষদ মেহতাও বেশ ভূমিকা নিয়ে জড়িয়ে আছেন। আশির দশকে শুরু হওয়া গল্প ১৯৯ পর্যন্ত সময়কালে এসে ভিন্নদিকে মোড় নেয়, কারণ ওই বছরই ভারতের স্টক মার্কেটের ‘বিগ বুল’খ্যাত হর্ষদ মেহতার হাজার কোটি টাকার স্ক্যাম সামনে আসে। হর্ষদ এই স্ক্যামে ব্যাংক আর স্টকমার্কেটকে যেভাবে নিজের হাতের খেলনা বানিয়ে খেলেছেন, সেই ঘটনাই উঠে এসেছে এই গল্পে।
তবে গল্পটা হর্ষদ মেহতার নয়, বরং তার স্ক্যামের অন্তর্ভুক্ত একটি ব্যাংকের একজন এজিএমের। যার নাম ভাস্কর। এই সিনেমার হিরো ভাস্কর। বিগ বুল হর্ষদ মেহতার বরাতে যারা যারা লাভবান হয়েছিলেন, শত শত কোটি টাকার কোটির মালিক হয়েছিলেন, তাদেরই একজন ভাস্কর।
সিনেমার প্রথমার্ধে ভাস্করের সংগ্রামী জীবন এবং তার অবৈধ কর্মকাণ্ডের সূচনা দেখানো হয়। তবে দ্বিতীয়ার্ধে গল্পের গতি কিছুটা কমে যায়। তবে দর্শককে পর্দায় বেধে রাখবে। একজন পুরুষ মানুষ তার পরিবারের সুখের জন্য কতটুকু রিস্ক নিতে পারে এই সিনেমা তারই উদাহরণ। ‘লাকি ভাস্কর’ আপানাকে দেখাবে দারিদ্র্য, দুর্নীতি, বড় বড় দুর্নীতিবাজের ছত্রচ্ছায়ায় দুর্নীতিতে জড়ানো, লোভ, টাকার গরম, সাধারণ পরিবারের সম্মান হারানোর ভয় এবং সর্বশেষে দেখা যাবে লোভকে কোথায় থামাতে হবে!
আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে হালে বেশ কয়েকটি হিন্দি সিনেমা ও সিরিজ হয়েছে। তারপরও ‘লাকি ভাস্কর’ নির্মাণগুণে আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, যে কিনা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার থেকে শতকোটির মালিক হয়, খুব চেনা এই গল্পেও নতুন অনেক কিছুই উপহার দিয়েছেন নির্মাতা।
তবে সিনেমাটি এতটা প্রশংসিত হওয়ার আরও একটি বড় কারণ দুলকার সালমান। জনপ্রিয় এই মালয়ালম তারকা ‘লাকি ভাস্কর’ দিয়ে ফেরার মতোই ফিরলেন তিনি। মধ্যবিত্ত ব্যাংকার থেকে শতকোটির মালিক ভাস্কর—এমন চরিত্র পর্দায় তিনি তুলে ধরেছেন খুবই বিশ্বাসযোগ্যভাবে। তাঁর প্রতিটি সংলাপ বলা, অঙ্গভঙ্গি থেকে রোমাঞ্চকর যাত্রা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা গেছে। তাঁর স্ত্রীর মীনাক্ষী চৌধুরীও দারুণ। এই সিনেমা দিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন যে গ্ল্যামারাস চরিত্রের বাইরে সাধারণ মধ্যবিত্ত গৃহবধূর চরিত্রেও তিনি ভালো করতে পারেন। ‘লাকি ভাস্কর’-এ প্রতিটি চরিত্রের কিছু না কিছু ভূমিকা আছে। এমনকি ভাস্করের বাবা, যে পুরো ছবিতেই পক্ষাঘাতের কারণে নির্বাক, সে–ও শেষের দিকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
‘লাকি ভাস্কর’ সিনেমার নাম ভূমিকায় থাকা দুলকার সালমানের বিপরীতে ছিলেন মীনাক্ষী চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন তিনু আনান্দ, পি সাই কুমার, রামকি, রঘু বাবু, সর্বদামান ডি ব্যানার্জি, শচীন খেড়েকার, প্রভাস শ্রীনু, হাইপার আদি, শিবনারায়ণ নারিপেদি ও সূর্য শ্রীনিবাস। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র ভাস্কর কুমার একজন নিম্ন–মধ্যবিত্ত মানুষ যিনি পেশায় ব্যাংকের ক্যাশিয়ার।
এফপি/এসএন