শেষ পর্যন্ত অপেক্ষাটা যেন সার্থক হলো। দেড় দশকের আকাঙ্ক্ষা, শত কোটি ইউরোর বিনিয়োগ, নেইমার-মেসি-এমবাপ্পে যুগের ছায়ায় হেঁটে চলা—সবকিছুর পর প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) আজ ইউরোপের সেরার মঞ্চে লিখে ফেলল নিজেদের নাম। জার্মানির মিউনিখের অলিয়্যাঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়ল তারা—ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলের বিধ্বংসী ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে নিল লুইস এনরিকের তরুণ, ক্ষুধার্ত সৈনিকেরা।
ম্যাচের ১১ মিনিটেই শুরু হয় ধ্বংসযজ্ঞ। যার পা থেকে এল প্রথম গোল, তিনি ইন্টার মিলানেরই সাবেক খেলোয়াড়—আচরাফ হাকিমি। বিরতিহীন পাসে বল আসে পিএসজির তরুণ সৈনিক দুয়ের পায়ে, আর তিনি চোখ বুজেই বাড়িয়ে দেন ফাঁকা জায়গায়। গোললাইনের কাছাকাছি থেকে নির্ভুল ছোঁয়ায় ইন্টারকে পিছনে ফেলেন হাকিমি। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল, আর সেটাই যেন পিএসজির আত্মবিশ্বাসের আগুনে প্রথম চিমটি।
মাত্র ২০ মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ১৯ বছর বয়সী দুয়ে। ওসমান ডেম্বেলের ডান দিক থেকে কড়া পাসে দুয়ের হাফ-ভলির শটটি ডিফেন্ডার ডি’মারকোর পায়ে লেগে দিক পাল্টে ঠকিয়ে দেয় সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমারকে। এক ঝলকে মনে হয়, ‘লাক’—কিন্তু ইউরোপ জয়ের পথে এমন সৌভাগ্যটুকুও লাগে।
বিরতির পর ইন্টার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও লুইস এনরিকের ছক-ভাঙা পজিশনাল ফুটবলের বিপরীতে তারা ছিল অসহায়। ৬৩ মিনিটে আবারও আলো ছড়ান দুয়ে। এরপর ৭৩ মিনিটে জর্জিয়ান তারকা খভিচা কভারাত্সখেলিয়া চমৎকার এক গোল করে ম্যাচে ইন্টারকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেন। শেষ পর্দায় মঞ্চে নামেন তরুণ সেনি মায়ুলু—তার প্রথম টাচেই বল জালে জড়িয়ে দেন। স্কোরবোর্ড তখন বলছিল, পিএসজি ৫, ইন্টার ০।
২০১৫ সালে বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জেতার পর দশ বছর পেরিয়ে গেল—এবং অবশেষে আরও একবার ফুটবল বিশ্বের এক বিস্ময়কর চূড়ায় পৌঁছালেন এনরিকে। তবে এবার ভিন্ন এক পথে। নেই মেসি, নেই নেইমার, নেই এমবাপ্পে। এই জয় নতুন রক্ত, নতুন দর্শনের জয়। ডোনারুম্মার দৃঢ়তা, ভিটিনহা-নেভেস-রুইজের নিয়ন্ত্রণ, ডেম্বেলে-দুএ- কভারাত্সখেলিয়ার বিদ্যুৎ গতির আক্রমণ—সব মিলিয়ে এই পিএসজি শুধু জিততেই আসেনি, তারা শাসন করতে এসেছে।
মজার ব্যাপার হলো, মিউনিখে আগে যত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল হয়েছে, তাতে সবসময় জিতেছে প্রথমবারের মতো ইউরোপজয়ী দলই। ১৯৭৯ সালে নটিংহাম ফরেস্ট, ১৯৯৩ সালে মার্সেই, ২০১২ সালে চেলসি—এবার তালিকায় যোগ হলো পিএসজি।
ইউরোপের নতুন রাজা এখন প্যারিস। তামাম ফুটবল বিশ্বে যাদের নিয়ে এতদিন ছিল ‘নেই ইতিহাস’ বলে কটাক্ষ, তারা আজ ইতিহাস লিখে দিল নিজেরাই। এই রাত প্যারিসের, এই ট্রফি লুইস এনরিকের, এই উদযাপন ফুটবলের সাহসিকতার।
আরআর