বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে আইনজীবীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, বিএনপি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছিল, কিন্তু এখন যারা উপদেষ্টা আছেন তারা হয়ত যৌক্তিক সময়ের অর্থটা বুঝতে পারছেন না। আমরা চাই না দেশের জনগণ রাস্তায় নেমে তাদের বুঝিয়ে দিক যৌক্তিক সময় কোনটা।

সোমবার (২ জুন) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের উদ্যোগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

কায়সার কামাল বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। এই দাবি হঠাৎ করে বলা হয়নি যেদিন প্রফেসর ইউনুস সাহেব শপথ নিয়েছিলেন সেদিনই তারেক রহমান বলেছিলেন রাজনৈতিকভাবে আমরা তাকে সমর্থন করি কিন্তু যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছি। যৌক্তিক সময়ের অর্থটা এখন যারা উপদেষ্টা আছেন তারা হয়ত বুঝতে পারছেন না। আমরা চাইনা দেশের জনগণ রাস্তায় নেমে তাদের বুঝিয়ে দিক যৌক্তিক সময় কোনটা। কারণ উপদেষ্টাদের মধ্যে এমন লোক আছেন তো ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২৪৯ ভোট পেয়েছিলেন। তারা নির্বাচনটা দিতে কেন ভয় পান বা দেরি করছেন দেশের মানুষ কিন্তু বুঝতে পারছেন। আর সেই জন্যই আমরা আমাদের যে দাবি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।

তিনি বলেন, আইনজীবী সমাজের প্রতি অনুরোধ জানাবো ২০০৬ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে আমরা আইনজীবী সমাজ বিরামহীনভাবে আইনের শাসন কায়েম করার জন্য, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের বাক স্বাধীনতা, মানুষের ভোটাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আপাতত একটু বিরতি নিয়েছি। যদি প্রয়োজন পড়ে এই আইনজীবী সমাজ রাস্তায় নামবো ভোটের দাবিতে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে, আইনের শাসন কায়েমের লক্ষ্যে।

তিনি আরও বলেন, দেশে যে মব জাস্টিস কালচার বাংলাদেশ তৈরি করা হয়েছে সেজন্য তো হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়নি। যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেখতে পাচ্ছি সেজন্য তো আমার ভাই রক্ত দেননি। আমরা চাই এই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে বাংলাদেশে আইনের শাসন থাকবে, যেই বাংলাদেশে ন্যায়বিচার থাকবে, যেই বাংলাদেশে সাংবিধানিক অধিকারগুলো প্রত্যেকটা নাগরিক পাবে। আর সেজন্যই জনাব তারেক রহমান ২০২৩ সালে ১১ জুলাই বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো ঘোষণা করা করেছেন।

যে রাষ্ট্র কাঠামো আমার আপনার মুক্তির গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো কৃষকদের গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো স্বাস্থ্য অধিকার কর্মীদের গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো মানবাধিকার কর্মীদের গ্যারান্টি দিচ্ছে, দেশের ১৮ কোটি মানুষের গ্যারান্টি দিচ্ছে, নিরাপত্তা দিচ্ছে। আইনজীবী সমাজের দায়িত্ব তারেক রহমানের এই ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করা।

জিয়াউর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় আদর্শ আদর্শ ছিল সততা ও দেশপ্রেম। আজকে আমাদের সময় এসেছে নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করার আমরা উনার আদর্শের কথা বলে রাজনীতিতে নিজের চেয়ারটা পাকাপোক্ত করছি। সুতরাং মাপকাঠিতে আমরা কতটুকু যেতে পেরেছি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ডিসিপ্লিনে বিশ্বাস করতেন। আইনজীবী হিসেবে কোর্ট প্রাঙ্গণে আমরা যারা নেতৃত্বে আছি কতটুকু ডিসিপ্লিন ফলো করছি। গত ১৬-১৬ বছর যখন ফ্যাসিস্ট রেজিম ছিল সেসময় আওয়ামী আইনজীবীরা যেভাবে অত্যাচার চালাতেন আইনজীবীদের উপর এবং আদালতে হুংকার দিতেন। আজকে যদি আইনজীবী ফোরামের নেতারা সেই কাজ করে তাহলে পার্থক্য কোথায়? জিয়াউর রহমানের ডিসিপ্লিন তো সে কথা বলেনা। আওয়ামী লীগের এই কার্যক্রমের কারণে শুধুমাত্র আদালত না ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, তারেক রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনার এই পতনের মাধ্যমে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। আমরা এমন কোনো কাজ করবো না যাতে দুর্দিনে আমাদের পালিয়ে যেতে হয়। জিয়াউর রহমানের কর্মীরা কখনো পালাতে শিখে নাই। আমরা বিএনপি অনেক দুর্যোগ দুর্দিন দেখেছি, ওয়ান ইলেভেনের সময় একটা নেতাকর্মীও পালিয়ে যায়নি। তখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এই দেশের মাটিতে মরতে চাই। আর আরেক নেত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে চলে গেছে। খালেদা জিয়া কিন্তু দেশ ছেড়ে পালাননি। আমরা নেতাকর্মী, আইনজীবী ভাইবোনেরা যারা আছি জিয়ার আদর্শকে বুকে ধারণ করে আমাদের মধ্যে সততা ও দেশপ্রেম জিনিসটা অনুভব করতে হবে।

ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে, সদস্য সচিব নিহার হোসেন ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আলহাজ বোরহান উদ্দিন ও ইকবাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী খান হাসান, মকবুল হোসেন ফকির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মহি উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

এফপি/ টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ‘ভাইরাল’ সিদ্দিককে গণপিটুনি Aug 15, 2025
img
খালেদা জিয়াকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত: আব্বাস Aug 15, 2025
এনসিপিতে পদত্যাগের হিড়িক, যা ভাবছেন কেন্দ্রীয় নেতারা Aug 15, 2025
img
ত্রাণ সহায়তা কমায় রাখাইনে তীব্র খাদ্য সংকট Aug 15, 2025
img
সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হলে ড. ইউনূস ইতিহাসে কলঙ্কিত হবেন : ফারুক Aug 15, 2025
img
ফেসবুকে ছবি শেয়ার করে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রদূতের Aug 15, 2025
img
নির্বাচন ঘিরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোনো সুযোগ নেই: ধর্ম উপদেষ্টা Aug 15, 2025
img
‘মুজিববাদের কবর রচনা’—ঢাবি শিক্ষার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা Aug 15, 2025
img
পাকিস্তানে ভারি বৃষ্টিতে ৪৩ জনের মৃত্যু Aug 15, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, ফাঁদে পড়া যাবে না: নেতাকর্মীদের গয়েশ্বর Aug 15, 2025
img
কেউ মানুক আর না মানুক, আজ শোক দিবস : জাহের আলভী Aug 15, 2025
img
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আল্লাহ ছাড়া বিএনপিকে কেউ রুখতে পারবে না : ফারুক Aug 15, 2025
img
খালেদা জিয়াকে কারাগারে চরম নির্যাতন করা হয়েছে : আব্বাস Aug 15, 2025
img
শেখ হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ গাড়ি চালকের নামে প্লট বরাদ্দ বাতিল Aug 15, 2025
img
বাংলাদেশে বিপ্লবের এক বছর পর আশা হতাশায় পরিণত -নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন Aug 15, 2025
img
মা হারালেন ধনকুবের জেফ বেজোস Aug 15, 2025
img
শেখ মুজিবুর রহমানের শাহদাত বার্ষিকীতে সাকিবের শ্রদ্ধা Aug 15, 2025
img
সরাসরি নরওয়েতে ফোন করে নোবেল পুরস্কার চেয়েছেন ট্রাম্প! Aug 15, 2025
img
শোক প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যা বললেন শাকিব খান Aug 15, 2025
img
পুতিন রাজি সমঝোতায়, জেলেনস্কিকে আলোচনায় চান ট্রাম্প Aug 15, 2025