রাজধানীর গাবতলীর হাটে বড় ছেলেকে নিয়ে কোরবানির পশু কিনতে আসেন আবদুল হাই। বিকেল থেকে পশু কেনার চেষ্টা করেন। বাবা-ছেলের পশু পছন্দ হলেও কাঙ্ক্ষিত দামে মেলাতে পারছিলেন না। তবে শেষ অবধি পশু নিয়ে হাট থেকে বাড়ি ফিরেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সাড়ে ৮টায় পশু নিয়ে হাট থেকে বের হওয়ার পথে কথা হয় আবদুল হাইয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোরবানির পশু কেনার জন্য বিকেলে হাটে এসেছি। আমাদের বাজেটের পশু মেলাতে অনেক কষ্ট হলো। শেষমেশ ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলাম।
আরেক ক্রেতা নাজমুল হক বড় একটি গরু নিয়ে হাট থেকে বের হচ্ছিলেন। গরু দেখে আশপাশের মানুষ জিজ্ঞেস করছিলেন, দাম কত? স্বতঃস্ফূর্ত নাজমুলের জবাব, ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার ছুটি শুরু হয়েছে। এদিন সকাল থেকে ছিল বৃষ্টি। কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কোথাও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি ছিল প্রায় বিকেল অবধি। এ অবস্থায় শেষ বিকেল থেকে গাবতলীর পশুর হাটে ক্রেতার ভিড় বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যা নাগাদ ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তখন একের পর এক ক্রেতা হাট থেকে কোরবানির পশু নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এসময় পশু কিনতে পারার স্বস্তি দেখা গেছে ক্রেতাদের চোখে-মুখে।
অন্যদিকে, বিকিকিনি বাড়ায় বিক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। তবে দাম পাওয়া নিয়ে বিক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ বলছেন, বিক্রি ভালো। আবার কারো কারো ভাষ্য, খুব বেশি লাভ না করে অনেকটা কেনা দামে পশু বিক্রি করতে হচ্ছে।
এবারের গাবতলীর হাটে ৯টি গরু এনেছেন মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, পাঁচটা বিক্রি করছি, বাকিগুলা আছে। লাভ খুব বেশি হবে না। টাকা তোলা গেছে। কিন্তু নিজের পরিশ্রমের টাকা উঠবে বলে মনে হয় না।
আরেক ব্যবসায়ী মো. হান্নান বলেন, এখন শেষ সময়। পশু ধরে রাখার সুযোগ নাই। পশু বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খুব বেশি লাভও হবে না, আবার খুব বেশি লসও হবে না। তবে বড় গরুর ব্যাপারিদের অবস্থা ভালো না। বড় গরুর চাহিদা কম। ক্রেতার দামের সঙ্গে মিলে না।
পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, পশু কিনতে আসা ক্রেতারা ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি কিনছেন। মাংসের মণভেদে ছোট আকারের গরু বিক্রি হয়েছে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। আর মাঝারি আকারের গরু ২-৩ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের গরুর চাহিদা কম থাকলেও ৫-৮ লাখ টাকায় স্বল্প সংখ্যক গরু বিক্রির কথা জানান ব্যাপারিরা।
জুলহাস নামের এক ব্যাপারি জানান, অনেকে একা একা কোরবান দেন। তাদের চাহিদা থাকে এক থেকে দেড় লাখ টাকার গরু। টাকা-পয়সা যাদের ভালো তারা হয়ত ৫-৬ লাখ টাকার গরু কেনেন। কিন্তু এরকম ক্রেতা এখন কম। দেশের যে পরিস্থিতি কেউ তো টাকা ছাড়ছে না, ভয়ে আছে।
শ্যামলীর বাসিন্দা আব্দুল আকন্দ পুরো পরিবার নিয়ে পশুর হাটে এসেছেন। গরু নিয়ে হাট থেকে বের হওয়ার পথে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গরু যেন সবার পছন্দ মতো হয় সেজন্য নিয়ে এসেছি। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলাম।
পশু না কিনে বাড়ি ফেরাদের একজন মো. আজিজ। তিনি জানান, দামে না বনায় গরু কিনতে পারলাম না। কালকে (শুক্রবার) আবার আসব হাটে। আর কালকে তো অবশ্যই কিনতে হবে।
এমআর