একটা বৈশ্বিক শিরোপার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা কতটা মরিয়া, তা তাদের নিবেদনেই ফুটে উঠেছে। বারবার আইসিসির মেগা ইভেন্টে দারুণ সম্ভাবনা দেখালেও শেষমেষ ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রের তৃতীয় আসরের ফাইনালে তারা সেই আক্ষেপ ঘুচানোর প্রায় কাছাকাছি। যা সম্ভব হয়েছে বড় ম্যাচে এইডেন মার্করামের অপ্রতিরোধ্য সেঞ্চুরি ও অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার দায়িত্বশীল ভূমিকায়।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২ উইকেটে ২১৩ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছে প্রোটিয়ারা। জয়ের জন্য তাদের আর দরকার ৬৯ রান, হাতে আছে ৮ উইকেট ও দুই দিন। তবে ম্যাচের ফলাফল পেতে আর সম্ভবত খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন নেই। যদিও জয়-পরাজয়ের সমীকরণ ছাপিয়ে আলোচনার বড় অংশজুড়ে রয়েছে চোট নিয়েও বাভুমার লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করে যাওয়া।
তৃতীয় দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার এই অধিনায়ক ৬৫ এবং মার্করাম ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন। যদিও বাভুমাকে দিনের লম্বা সময় ধরে টিকে থাকতে হয়েছে চোটের সঙ্গে লড়াই করে। হ্যামস্ট্রিং চোট সত্ত্বেও দিনের প্রায় ৩৩ ওভার ব্যাটিং করেছেন তিনি। চোট পান চা বিরতির ২ ওভার আগে। ফলে প্রশ্নও উঠেছে কেন দক্ষিণ আফ্রিকা বাভুমাকে রিটায়ার্ড হার্ট দেখিয়ে উঠিয়ে নেয়নি। যা নিয়ে ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স জানান, ‘চা বিরতিতে আমাদের বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, সে কী ব্যাটিং চালিয়ে যাবে এবং চোট তার পারফরম্যান্সে কেমন প্রভাব ফেলবে। কেবল তাই নয়, এটি এইডেনের ছন্দও প্রভাবিত করতে পারে।’
এর আগে লক্ষ্য তাড়ায় মাত্র ৯ রানেই ওপেনার রায়ান রিকেলটনকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের সেই ব্যাকফুটে অবস্থান বদলায় দ্বিতীয় উইকেটে মার্করাম ও উইয়ান মুল্ডারের ৬১ রানের জুটিতে। কিন্তু মুল্ডার আউট হলে আবারও শঙ্কা জাগে প্রোটিয়াদের। এরপর ধীরস্থির ও ঠাণ্ডা মাথায় মার্করাম-বাভুমা মিলে ১৪৩ রানের জুটি গড়েন। যদিও মাত্র ২ রানেই ফিরতে পারতেন বাভুমা। তার স্লিপে তোলা ক্যাচ ধরতে গিয়ে আঙুল ভেঙেছেন স্টিভ স্মিথ, ক্যাচটি হাতছাড়া করেছেন। এরপর বাভুমা-মার্করামের দারুণ বোঝাপড়া প্রোটিয়াদের স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করে তোলে।
বাভুমা চোটে পড়ার পরও তাকে খেলানো নিয়ে ব্যাটিং কোচ প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল দুই রান সিঙ্গেলে রূপ নিতে পারে, তারা দুই ও তিন রান নিতে পারবে না। তবুও তারা একসঙ্গে খেলা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে অবিচল ছিল। এইডেনের (মার্করাম) যুক্তি ছিল এই জুটি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ওপরে (ত্রিস্তান) স্টাবস প্রস্তুত ছিল। কিন্তু সেরকম কিছু করলে আপনাকে নতুন করে ফের জুটি গড়তে হতো। তাই দুজনের অনুভূতি ছিল তারা চালিয়ে যাবে। এইডেন টেম্বার রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে দৌড় নিয়ে অসুবিধার কথা মাথায় রেখেছিল। সেভাবেই তারা চালিয়ে গেছে।’
তৃতীয় দিন তো বাভুমা পার করলেন, চতুর্থদিনও তাকে ক্রিজে ব্যাট হাতে দেখা যাবে কি না সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল প্রিন্সকে। সাবেক এই প্রোটিয়া ক্রিকেটারের উত্তর, ‘তাকে পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই লড়াই করতে হয়েছে এবং এটা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তও হতে পারে। টেস্ট ক্রিকেটের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার মতে এটা সবচেয়ে বড় মঞ্চ। আমার মনে হয়, ম্যাচের শেষে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিৎ।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাভুমার এমন বীরোচিত নিবেদনের প্রশংসা করেছেন ক্রিকেটভক্তরা।
পিএ/এসএন