হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলিউড অভিনেত্রী কারিশমা কাপুরের সাবেক স্বামী, ভারতের অন্যতম ধনকুবের সঞ্জয় কাপুর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, পোলো খেলার সময় হার্ট অ্যাটাক হয় সঞ্জয়ের, এরপরই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন তিনি। সঞ্জয়ের মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে বলিউড প্রাঙ্গনে।
শোকাহত কারিশমা কাপুরও। বিচ্ছেদের পর দুজনের সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দিলেও ধীরে ধীরে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন দুজন। তবে একসময় প্রাক্তন স্বামী সঞ্জয়কে নিয়ে কারিশমা কাপুরের ছিল গুরুতর সব অভিযোগ।
বলিউডের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন কারিশমা কাপুর।
একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। ছিলেন এক নম্বর নায়িকা। জিতেছেন অসংখ্য পুরস্কার। নব্বই দশকে কারিশমা কাপুরের সাফল্য রীতিমতো আকাশছোঁয়া ছিল।
কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে সেই সাফল্য তো দূর, এক ফোঁটা শান্তিও পাননি নায়িকা। বরং নিগ্রহ, নির্যাতনে কাটিয়েছেন। এর আগে একটি সাক্ষাৎকারে সেই বিবাহিত জীবনের কালো দিকটা প্রকাশ করেছিলেন রাজ কাপুরের নাতনি কারিশমা। জানিয়েছেন, মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে তাঁকে নিলামে তুলতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন স্বামী সঞ্জয় কাপুর!
একাদিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে কারিশমার সেই সাক্ষাৎকার প্রচার হয় যেখানে অভিনেত্রী জানান, বিয়ের পর পরই শুরু হয়েছিল সঞ্জয়ের অত্যাচার। মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে কারিশমাকে নিলামে তুলেছিলেন সঞ্জয়।
নিজের এক বন্ধুর সঙ্গে সহবাসের জন্য জোর করেছিলেন। এমনকি, সেই বন্ধুর কাছে কারিশমার সঙ্গে সহবাসের দামও হাঁকিয়েছিলেন দিল্লির ব্যবসায়ী সঞ্জয়। রাজি হননি কারিশমা। পরিণামে চলেছিল চরম মারধর। এখানেই শেষ নয়, স্বামীর পাশাপাশি শাশুড়িও মারধর করতেন বলে অভিযোগ কারিশমার। ওই সাক্ষাৎকারে কারিশমা জানান, তাঁকে বিয়ের পরেও প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেননি সঞ্জয়। লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন। বিষয়টি কারিশমা জানতে পেরে প্রতিবাদ করেন। তখন সঞ্জয় এবং তাঁর মা, দুজনে মিলে মারেন তাঁকে।
প্রাক্তন স্বামীর অত্যাচারের আরো কিছু নমুনা তুলে ধরেছেন কারিশমা। তখন তিনি সন্তানসম্ভবা। স্বাভাবিক কারণেই ওজন বেড়েছিল। শাশুড়ির উপহার দেওয়া পোশাক গায়ে ঢুকছিল না। এটা জেনে মাকে চড় দেওয়ার উস্কানি দিয়েছিলেন সঞ্জয়।
২০১৬ সালে পাকাপাকি বিচ্ছেদ হয় সঞ্জয়-কারিশমার। মেয়ের প্রাক্তন স্বামীকে ‘তৃতীয় শ্রেণির মানুষ’ বলে গালাগালি দিয়েছিলেন কারিশমার বাবা রণধীর কাপুর। টাকার জন্য ধনী ব্যবসায়ী সঞ্জয়কে বিয়ে করার অভিযোগও উড়িয়ে দেন তিনি। রণধীর কাপুর বলেন, ‘‘আমাদের ক্ষমতা সকলে জানেন। আমরা কাপুর। আমাদের কারো টাকার পেছনে ছোটার দরকার পড়ে না। শুধু টাকা নয়, আমাদের প্রতিভাও যথেষ্ট। সেই দিয়ে আমাদের বাকি জীবনের গ্রাসাচ্ছাদন অনায়াসে হয়ে যাবে।’’ এরপরেই রণধীর আক্রমণ করেছিলেন সঞ্জয়কে। বলেছিলেন, ‘‘উনি একটা তৃতীয় শ্রেণির মানুষ। আমি কোনোদিন ওর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইনি। অন্য নারীদের সঙ্গে থাকতেন। গোটা দিল্লি জানে উনি কেমন। আর কোনো কথা বলতে চাই না।’’
আইনি লড়াইয়ে সঞ্জয়ের সঙ্গে ডিভোর্সের পর মোটা টাকা খোরপোষ বাবদ পান কারিশমা। শোনা যায়, সঞ্জয়ের খারের একটি বাড়ি কারিশমার নামে লিখে দেওয়া হয়েছিল, এছাড়াও দুই সন্তানের নামে ১৪ কোটি টাকা ডিপোজিট করেন সঞ্জয়, যার থেকে মাসিক ১০ লক্ষ টাকা সুদ পান কারিশমার সন্তানেরা।
বিবাহিত জীবনে কারিশমা ছিল সঞ্জয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী। কারিশমার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তৃতীয় বারের মতো প্রিয়া সচদেবকে বিয়ে করেন সঞ্জয়। দুজনের সেই সংসারে একটি ছেলেও রয়েছে। কারিশমার সঙ্গে রয়েছে সঞ্জয়ের দুই সন্তান। বিচ্ছেদের পরও সন্তানদের প্রয়োজনে সময় দিতেন সঞ্জয়। কারিশমার সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো করেছিলেন গত কয়েক বছরে। তবে শেষ পর্যন্ত গত ১২ জুন না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বহুল আলোচিত ভারতের এই ধনকুবের।
এফপি/ টিএ