ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই চিত্রনায়ক ও সাবেক এমপি ফেরদৌস রয়েছেন আত্মগোপনে। অভিনয় কিংবা রাজনীতির মঞ্চে অনুপস্থিত থাকলেও এবার খবরের শিরোনামে এসেছেন একটি কবিতা দিয়ে—যা তিনি লিখেছেন তার বান্ধুবী ভারতীয় চিত্রনায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর জন্য। আর এটি প্রকাশ্যে আসতেই ফেরদৌসকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সম্প্রতি ঋতুপর্ণা নিজের ফেসবুকে ফেরদৌসের লেখা একটি কবিতার স্ক্রিনশট শেয়ার করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বন্ধুকে।
ঋতুপর্ণা লিখেছেন, ‘আমার প্রিয় বন্ধু এবং পরিবারের সদস্য ফেরদৌসকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এই সুন্দর উপহারের জন্য (তোমার লেখা কবিতা) ধন্যবাদ।’ জানা গেছে, কবিতাটি তিনি লিখেছেন ঋতুপর্ণার সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা পুরাতন-এর সাফল্য উপলক্ষে।
এপ্রিল মাসে ছবিটি মুক্তি পায়। ফেরদৌস ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও, আত্মগোপনে থাকায় তা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ঋতুপর্ণা। তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই কবিতা পুরাতন সিনেমার সফলতার জন্য উৎসর্গ করা, তাই এটি আমার কাছে আরও বিশেষ। প্রদর্শনীর সময় আমরা তোমাকে খুব মিস করেছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই তোমার সঙ্গে দেখা হবে, তোমার সঙ্গে কাজও হবে।’
এদিকে আওয়ামী লীগের দোসর ফেরদৌসকে প্রকাশ্যে আনতেই সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ইমাম উদ্দিন ইমন নামে একজন লিখেছেন, বিনা ভোটের এমপিগিরির স্বাদ মিটুক। আরও দুইটা আছে- মাশরাফি ও সাকিব।
মো. আনোয়ার লিখেছেন, আহারে বেচারা ফেরদৌস চামচামি করতে গিয়ে এই অবস্থা।
হাজেরা আক্তার বলেন, চোরের আবার রোমান্স।
নজরুল ইসলাম বলেন, এদের ভন্ডামি আর বন্ধ হলো না।
আমিনুর আমিন মজা করে লিখেছেন, তাও ভালো শেখ হাসিনার জন্য লেখেনি।
শাহিনুর শাকি লিখেছেন, নিজের খবর নাই, আরেক জনরে কবিতা লেখে, চামচা।
ফেরদৌসকে কটাক্ষ করে কামরুল ইসলাম লিখেছেন, ফেরদৌস এখন ফেরারি কবি!
ইমান আলী লেখেন, সারা জীবন ফেরদৌসকে গর্তেই থাকতে হবে।
খন্দকার আলী লিখেছেন, তোমার মা হাসিনা আর বাবা মোদির নামে কবিতা লেখ না কেন?
রাসেল মাহমুদ জুবেদ বলেছেন, নায়ক ফেরদৌস বাটপার।
রক্তিম বড়ুয়া লিখেছেন, খুনি সেক্যুলার মুনাফিক ফ্যাসিস্ট ফেরদৌস শয়তানের ফাঁসি চাই।
মূলত জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় উৎসাহ দিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী। আন্দোলনকে কীভাবে দমানো যায়, সে ব্যাপারে তারা সরকারকে দিয়েছেন নানা পরমার্শও। নায়ক-নায়িকাদের গোপন একটি অনলাইনের গ্রুপের (আলো আসবেই) এ সম্পর্কিত স্ক্রিনশট তখন ছাত্র-জনতার মনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। আর এই ক্ষত যে এখনো শেষ হয়নি, তা বোঝা যায় এসব কমেন্ট থেকেই।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে হঠাৎ বৃষ্টি ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় ফেরদৌসের। এই ছবি তাকে এনে দেয় জনপ্রিয়তা এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর বাংলাদেশ ও কলকাতার বহু ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ২০০১ সালে ওস্তাদ সিনেমায় প্রথমবারের মতো ঋতুপর্ণার সঙ্গে জুটি বাঁধেন। পরবর্তীতে তারা একসঙ্গে কাজ করেছেন একাধিক সিনেমায়।
সম্প্রতি একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আত্মগোপনে থাকা ফেরদৌস বর্তমানে লেখালেখিতে সময় দিচ্ছেন। কোথায় আছেন, তা জানা না গেলেও তার সাহিত্যচর্চা ও বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক আবারও প্রমাণিত হলো ঋতুপর্ণার এই পোস্টের মাধ্যমে। মাঝখানে খবরের শিরোনাম হয়- ফেরদৌস তার বন্ধুবী ঋতুপর্ণার বাসাতেই আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এই কথা অস্বীকার করেছিলেন অভিনেত্রী।
টিকে/টিএ