অনেকদিন ধরেই বলিউড “মূলের সঙ্গে যুক্ত” গল্প বলার কথা বলছে, কিন্তু বাস্তবে সেই দাবির সঙ্গে বাস্তবতা মেলে না। যতবার তারা “রুটেড” বা “গ্রাউন্ডেড” গল্পের কথা বলে, ততবারই তারা সত্যিকারের সরলতা ও সত্যতা থেকে আরো দূরে সরে যায়। দক্ষিণ ভারতের সিনেমাগুলো যেখানে আন্তরিকভাবে মানুষের জীবনের গল্প তুলে ধরছে, বলিউড সেখানে এখনো নকল সেট, বড় তারকা আর সাজানো আবহে আটকে আছে।
বর্তমানে বলিউডে ‘রুটেড’ বলতে বোঝায়—একটা গ্রামীণ সেট তৈরি করে তাতে বড় কোনো নায়ক বসানো, কৃত্রিম ধুলো উড়িয়ে লোকগান লাগিয়ে দেওয়া, আর তারপরে বলে দেওয়া ‘এটাই আসল’। অথচ এসব সাজানো আবহে জীবন নেই, বাস্তবতা নেই, অনুভব নেই। বরং এমনকি প্রশংসিত ছবি ‘লাপাতা লেডিজ’-এর মধ্যেও একটি পরোক্ষ তাচ্ছিল্য ছিল গ্রামজীবনের প্রতি।
আসল রুটেড গল্প দেখতে চাইলে চোখ রাখতে হয় দক্ষিণ ভারতের দিকে। মালায়ালম সিনেমা ‘আলাপুঝা জিমখানা’ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই ছবিতে নেই কোনো সুপারস্টার, নেই কোনো ধামাকা ক্লাইম্যাক্স। আছে শুধু জীবনের ছোট ছোট টুকরো মুহূর্ত, হাসি আর আবেগে ভরা সহজ গল্প। পরিচালনায় খালিদ রহমান, এই সিনেমা আসলে একধরনের ‘হ্যাঙ্গআউট কমেডি’—যেখানে গল্প উঠে আসে চরিত্র থেকে, পরিবেশ থেকে, বাস্তবতা থেকে।
বলিউড আজও যেন মনে করে, একটিকে “ডি-গ্ল্যাম” রোল দিলেই ছবিটি গ্রাউন্ডেড হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে তারা যেভাবে স্থানীয় সংস্কৃতিকে সহজ করে, ভুলভাবে তুলে ধরে, তাতে ওই সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই গড়ে ওঠে না।
আসল রুটেড সিনেমা মানে হলো—একটি এলাকার আবেগকে বোঝা, সেই এলাকার ভাষা, ছন্দ, বিশ্বাসকে সম্মান করা, এবং গল্প বলার সময় আন্তরিক থাকা। চরিত্রের ভেতর দিয়ে গল্পকে এগিয়ে নেওয়া, জায়গার নির্দিষ্টতা বোঝা—এগুলো ছাড়া শুধু স্টার আর সেটে গল্প বাস্তব হয় না।
দর্শক সবসময় টের পায়, গল্পটি তার সঙ্গে কথা বলছে কি না। এমনকি সে ভাষাটা না বুঝলেও অনুভব করতে পারে গল্পের আন্তরিকতা।
দক্ষিণ ভারত, বিশেষ করে মালায়ালম সিনেমা আজও এ শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে বারবার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বলিউড কি সত্যিই শিখবে? নাকি শুধু ভান করে যাবে, যেন অনেক আগেই সব শিখে ফেলেছে।
পিএ/এসএন