সোমবার দিবাগত রাতে যখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের বিরতি ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন তাৎক্ষণিকভাবে তা মেনে নেয়নি ইরান এবং ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর ত্যথ অনুসারে, ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পর মঙ্গলবার সকালে ও বেলা সাড়ে দশটার দিকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে অন্তত দু’বার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। অন্যদিকে, মঙ্গলবার সকাল পেরিয়ে যাওয়ার পরও তেহরান ও তার আশেপাশে বিমান অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল ইসরায়েল।
ট্রাম্প এতে ব্যাপক বিরক্ত-ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তার ক্ষোভ বা বিরক্তি তুলনামূলকভাবে ইসরায়েলের প্রতি বেশি ছিল। কারণ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের মাত্রা বেশি ছিল ইসরায়েলের।
তারপরও ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির শর্ত মানতে বাধ্য করতে সফল হয়েছেন ট্রাম্প। আর এ ইস্যুতে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে যা যা করেছেন ট্রাম্প— তার একটি তালিকা তৈরি করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। এগুলো হলো—
ইরান-ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ‘এফ বোমা’ নিক্ষেপ
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের দায়ে ইরান ও ইসরায়েল— উভয়কে ছাপার অযোগ্য ইংরেজি গালি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবার মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে যোগ দিতে ওয়াশিংটন থেকে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে রওনা দেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে ওঠার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় কালে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমাদের দু’টো দেশ আছে— যারা দীর্ঘ সময় ধরে পরস্পরের সঙ্গে কঠিন লড়াই করছে এবং তারা জানে না তারা কী…. করে বেড়াচ্ছে (উই হ্যাভ টু কান্ট্রিজ দ্যাট হ্যাভ বিন ফাইটিং ফর সো হার্ড অ্যান্ড সো লং অ্যান্ড দে ডোন্ট নো হোয়াট দ্য `ফা..' দে আর ডুইং)।”
নেতানিয়াহুকে ধমক
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইসরায়েল বিমান অভিযান চালাচ্ছে— সংবাদ পাওয়ার পর নেতানিয়াহুকে ফোন করে ধমক দিয়েছেন ট্রাম্প। পরে এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, “আমি ইসরায়েলের প্রতি খুশি নই। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর সংঘাত বন্ধ করা এবং যুদ্ধবিমান ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে ১২ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। আমি ইরানের ওপরও খুশি নই।”
পরে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় ইসরায়েলের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, “ইসরায়েল, বোমা ফেলা একদম বন্ধ করুন। যদি আপনারা এটা বন্ধ না করেন, তাহলে তা হবে যুদ্ধবিরতির গুরুতর লঙ্ঘন। এখনই, এই মুহূর্তে নিজেদের পাইলটদের ফিরিয়ে আনুন।”
ইরানে আর হামলা চালাবে না ইসরায়েল
ইসরায়েলের উদ্দেশে এই বার্তা পোস্ট করার কিছু সময় পর আরও একটি বার্তা ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, ইসরায়েল ইরানে আর হামলা চালাবে না।
ইরান কখনও তার পরমাণু প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে না
মার্কিন সামরিক অভিযান ‘মিডনাইট হ্যামার’ ইরানের পরমাণু প্রকল্পের মূলে আঘাত হেনেছে এবং এই আঘাত কাটিয়ে দেশটি ফের কখনও তার পরমাণু প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে না বলে সাংবাদিকদের জানান ট্রাম্প। মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের উদ্দেশেওয়াশিংটন ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন বিমান বাহিনীর অভিযানে ইরানের পরমাণু প্রকল্পের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ফের পরমাণু প্রকল্প শুরু করা সম্ভব হবে না তেহরানের পক্ষে। অপারেশন মিডনাইট হ্যামার ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার মূলে আঘাত হেনেছে।”
“এমনকি ইরানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাতেও হামলা করা হয়েছে। বি ২ (অভিযানে ব্যবহৃত যুদ্ধ বিমান) পাইলটরা তাদের দায়িত্ব চমৎকারভাবে পালন করেছেন। তাদের কাজ এতটা নিখুঁত হবে— এমনটা কেউই ভাবতে পারেনি।”
এফপি/ টিকে