বলিউডের নতুন ধারার সিনেমার যে যাত্রা সমাজ সচেতন গল্প বলার মাধ্যমে এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে, তার অন্যতম অগ্রদূত আয়ুষ্মান খুরানা এবার পৌঁছে গেলেন এক গৌরবময় স্বীকৃতির শিখরে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননামূলক মঞ্চ অস্কারের সংগঠন ‘দ্য অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’ তাকে সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই স্বীকৃতি শুধু আয়ুষ্মানের জন্য নয়, ভারতীয় সিনেমার নতুন চিন্তাধারার জন্যও এক বড় সম্মান।
অস্কারের সদস্যপদে এবার আয়ুষ্মানের পাশাপাশি রয়েছেন কামাল হাসান, আরিয়ানা গ্রান্ডে, জেরেমি স্ট্রং ও জিলিয়ান অ্যান্ডারসনের মতো বিশ্বমানের শিল্পীরা। অ্যাকাডেমির প্রধান নির্বাহী বিল ক্রেমার ও সভাপতি জ্যানেট ইয়াং স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, এই নির্বাচিত শিল্পীরা বিশ্ব চলচ্চিত্রে স্থায়ী প্রভাব রেখে চলেছেন।
কিন্তু কেন আয়ুষ্মান খুরানা? এর উত্তর লুকিয়ে আছে তার কাজের সাহসিকতা, শৈল্পিক মনোভাব ও সমাজ সচেতনতা নিয়ে নিরলস সক্রিয়তায়। ‘আর্টিকেল ১৫’ বা ‘শুভ মঙ্গল জ্যাদা সাবধান’-এর মতো ছবিতে তিনি জাতপাত, লিঙ্গবৈষম্য, শারীরিক লজ্জা, সমকামী প্রেম— এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করে কাজ করেছেন, যা ভারতীয় মূলধারার সিনেমায় খুব কমই দেখা যায়। বাণিজ্যিক সাফল্যের সঙ্গে সামাজিক বার্তাকে মিলিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নতুন এক হিন্দি হিরোর সংজ্ঞা।
তবে আয়ুষ্মান শুধুই একজন অভিনেতা নন। ২০২৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় জায়গা পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন টাইম১০০ ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড। পাশাপাশি ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার জাতীয় দূত হিসেবে শিশুদের অধিকার, শিক্ষা ও লিঙ্গ সমতার পক্ষে জোর প্রচার চালাচ্ছেন।
এই সম্মাননা পেয়ে আয়ুষ্মান সামাজিক মাধ্যমে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। একে তিনি নিজের কেরিয়ারের এক বড় মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার একটাই প্রত্যাশা— ভারতীয় গল্পগুলো যেন আরও বেশি করে বিশ্বমঞ্চে প্রতিধ্বনিত হয়।
অস্কার অ্যাকাডেমির এই আহ্বান আয়ুষ্মান খুরানার ব্যক্তিগত স্বীকৃতির বাইরে গিয়ে এক বৃহৎ বার্তা দেয়। এটি প্রমাণ করে যে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া, গভীর সামাজিক বিষয় নিয়ে তৈরি সিনেমাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত হতে পারে। এটি ভারতীয় সিনেমার সেই অংশের স্বীকৃতি, যা বিনোদনের গণ্ডি পেরিয়ে সচেতনতার আলো জ্বালায়।
কেএন/টিকে