বড় বাজেট, বড় তারকা—তবু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতা। ‘'ঠাগস অফ হিন্দুস্তান’-এর সেই ব্যর্থতার পেছনের আসল কারণ নিয়ে এবার মুখ খুললেন আমির খান। The Lallantop-এ দেওয়া এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে প্রিয় প্রকল্পটি তার হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল; কেন একে একে তিন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সিনেমাটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; আর কীভাবে সৃজনশীল সংঘাতের ফলে গল্পের মূলে ফাটল ধরেছিল।
আমির খান সোজাসাপ্টা বললেন, ছবির শুরুর পরিকল্পনায় দীপিকা পাড়ুকোন, আলিয়া ভাট এবং শ্রদ্ধা কাপুরকে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনজনেই এক কথায় ‘না’ বলে দেন। আমিরের কথায়, ‘‘দীপিকা না বলল, আলিয়া না বলল, শ্রদ্ধাও না বলল।’’ সেই সময় ছবিটির বিপুল বাজেট থাকা সত্ত্বেও নায়িকারা যেন আগেভাগেই বুঝে ফেলেছিলেন, প্রকল্পটি হয়তো নিরাপদ নয়।
অবশেষে ‘দঙ্গল’ খ্যাত ফাতিমা সানা শেখকে কাস্ট করা হয়, তবে নায়িকা হিসেবে নয়। আমির জানিয়েছেন, দর্শকরা দঙ্গল-এ তাদের বাবা-মেয়ের সম্পর্ক দেখার পর আর রসায়ন গ্রহণ করবেন না—এই চিন্তায় তাকে প্রধান চরিত্রে রাখা হয়নি। তবে আমির নিজে এতে একমত ছিলেন না। তাঁর মতে, ‘‘আমরা তো অভিনেতা — দর্শকদের এতটা অবমূল্যায়ন করা ঠিক নয়।’’
সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছিল সিনেমার গল্পে হঠাৎ পরিবর্তনের মাধ্যমে। আমির জানান, প্রথমে ছবির কাহিনি ছিল জাফিরা বেগ অর্থাৎ ফাতিমার প্রতিশোধকে কেন্দ্র করে। অমিতাভ বচ্চনের চরিত্র ‘আজাদ’-এর মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল ঠিক ইন্টারভ্যালে। কিন্তু পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ আচার্য (ভিক্টর) ও প্রযোজক আদিত্য চোপড়া মিলিয়ে পুরো চিত্রনাট্য বদলে দেন। আমির প্রায় ছয় থেকে আট মাস এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মত দেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বদলানো যায়নি।
‘'ঠাগস অফ হিন্দুস্তান’কে ভারতের ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’ বলা হচ্ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দর্শক পেলেন কিছু চমৎকার ভিজুয়াল ছাড়া আর কিছুই না। গল্প ছিল ছড়ানো-ছিটানো, আবেগ ছিল না, চরিত্রের গভীরতা ছিল না। আমির স্পষ্ট বললেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত যা বানানো হয়েছিল — সেটা আমি সই করিনি।’’
বর্তমানে আমিরের নতুন ছবি ‘সিতারে জামিন পার’ প্রশংসা কুড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ‘'ঠাগস অফ হিন্দুস্তান’-এর এই অনুশোচনা তাকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। তাঁর এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, কেবল বড় তারকা, বিশাল বাজেট আর শক্তিশালী স্টুডিও থাকলেই সফল সিনেমা তৈরি হয় না। ভুল কাস্টিং, বারবার চিত্রনাট্য বদলানো আর সৃজনশীল সংঘাত—সব মিলিয়ে কীভাবে একটি সম্ভাবনাময় সিনেমা ব্যর্থতার পাঠ হয়ে যায়, তা বলিউডের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এফপি/ টিএ