একটা সময় ছিল, যখন আমির খানের নামটাই যথেষ্ট ছিল ছবি সুপারহিট হওয়ার জন্য। "থ্রি ইডিয়টস", "দঙ্গল" কিংবা "পিকে" প্রতিটি ছবি ভারতের বক্স অফিসে শুধু ইতিহাসই গড়েনি, দর্শকের মনও জয় করেছে। সেই আমির খান যখন প্রায় পাঁচ বছর পর ফিরলেন নতুন ছবি সিতারে জমিন পার (এসজেডপি) নিয়ে, প্রত্যাশার পারদ তাই স্বাভাবিকভাবেই ছিল অনেক উঁচুতে।
ছবিটি মুক্তি পায় ২০ জুন ২০২৫। নারী প্রধান চরিত্রে ছিলেন জেনেলিয়া দেশমুখ। দ্বিতীয় মঙ্গলবার পর্যন্ত এর আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩০ কোটি। তাতেও কিন্তু কাটেনি বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, আজকের দিনে এ আয় কি যথেষ্ট? কেউ বলছেন এটি ব্যর্থতা, আবার কেউ বলছেন বাস্তবের প্রেক্ষিতে ছবিটি সফল।
একটা সময় ছিল যখন ১০০ কোটির ঘরে ঢুকলেই ছবি ‘ব্লকবাস্টার’ তকমা পেত। কিন্তু ২০২৫ সালের বলিউড বাস্তবতায়, শুধু আয় নয়, সেই আয়ের পেছনের খরচ, প্রমোশন, বাজারজাতকরণ, এমনকি তারকার নামও একটি ছবির সাফল্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। সিতারে জমিন পার এর বেলায় বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ থেকে ১২০ কোটি। ব্রেক-ইভেন পৌঁছাতে প্রয়োজন অন্তত ২০০ কোটি। এই হিসেবে, ছবির বর্তমান আয়কে মাঝারি বলাই নিরাপদ।
তবে অর্থনীতির হিসাব ছাপিয়ে, আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে সিনেমাটির ভাবনা ও দর্শকের প্রতিক্রিয়া। মাল্টিপ্লেক্স দর্শকেরা ছবিটির আবেগঘন গল্প ও আমির-জেনেলিয়ার রসায়নে মুগ্ধ হলেও সিঙ্গেল স্ক্রিনের দর্শকরা খুঁজে পাননি চটকদার কিছু না আছে আইটেম গান, না রয়েছে জমকালো অ্যাকশন দৃশ্য। সমাজ সচেতন বার্তাই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু দর্শকের জন্য ক্লান্তির কারণ।
চলচ্চিত্র সমালোচকরা বলছেন, আমির খান চেষ্টা করেছিলেন কনটেন্ট আর বাণিজ্যের মেলবন্ধন ঘটাতে। কিন্তু ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে কোথাও যেন আবেগ এবং বিনোদনের মাঝামাঝি ঝুলে গেছে ছবিটি। একে ফ্লপ বলা যায় না, তবে ‘আমির খান’-এর মাপে একে ‘সুপারহিট’ বলতেও দ্বিধা থাকছেই।
তবে এখনও আশার আলো একেবারে নিভে যায়নি। তৃতীয় সপ্তাহে যদি আয় স্থিতিশীল থাকে, তবে ‘অ্যাভারেজ গ্রোসার’ বা সেমি-হিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে ছবিটি। তা না হলে ডিস্ট্রিবিউটরদের জন্য এটি হয়ে উঠবে হতাশার আরেক নাম।
সিতারে জমিন পার তাই শুধু আরেকটি চলচ্চিত্র নয়, বরং এক প্রবীণ তারকার শিল্প ও বাজারের দ্বন্দ্বের এক সৎ দলিল। হয়তো এটিই আমির খানের নতুন অধ্যায়ের শুরু যেখানে কনটেন্টই রাজা, আর সফলতার সংজ্ঞা প্রতিদিনই বদলাচ্ছে।
পিএ/টিএ