যখন আলোয় ঝলমলে গ্ল্যামার আর বিশাল বাজেটের ফাঁদে পড়ে যান বহু নামী তারকা, তখন দুলকার সালমান বেছে নিচ্ছেন একেবারে আলাদা পথ—ধীর, স্থির ও সচেতন। তিনি যেন আগেভাগেই বুঝে নিয়েছেন, সিনেমায় শুধু উপস্থিত থাকলেই চলবে না, থাকতে হবে সঠিক জায়গায়। আর ঠিক এই কারণেই তাঁকে ভারতীয় সিনেমা জগতে বলা হচ্ছে, “ফ্লপ ডজার”।
অভিনয় নয়, কৌশল দিয়েই দুলকার জয় করে নিচ্ছেন একের পর এক খেলা। প্রমাণও রয়েছে হাতে-নাতে। সম্প্রতি তিনটি বড় বাজেটের সিনেমা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁকে বাঁচিয়েছে সম্ভাব্য ক্যারিয়ার ক্ষতির হাত থেকে। যখন অনেক তারকা চিত্রনাট্য না পড়ে শুধুমাত্র নাম, বাজেট বা পরিচালকের প্রতি মোহে সই করে ফেলেন, তখন দুলকার ছবির গল্প না পড়ে কখনোই সম্মতি দেন না।
প্রথম সিনেমাটি ‘ইন্ডিয়ান টু’। কাল্ট ক্লাসিক ‘ইন্ডিয়ান’-এর সিক্যুয়েল হিসেবে যার প্রতি দর্শকের আগ্রহ ছিল আকাশছোঁয়া। প্রস্তাবিত চরিত্রে ছিলেন দুলকার, কিন্তু পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন সিদ্ধার্থ। মুক্তির পর দেখা গেল, সমালোচক এবং দর্শক—দুই পক্ষই ছবির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। শুধু পুরনো জনপ্রিয়তা নিয়ে ছবি বানালেই যে সাফল্য আসবে না, সেটি দুলকার আগেই বুঝেছিলেন।
দ্বিতীয় ছবি মণি রত্নম পরিচালিত ‘ঠাগ লাইফ’। কমল হাসান ও সিম্বুর উপস্থিতিতে এটি ছিল এক উচ্চাশী গ্যাংস্টার নাটক। বাজেট ছিল বিশাল, তবে না প্রেক্ষাগৃহে, না ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কোনো দাগ কাটতে পারেনি সিনেমাটি। দুলকার সই করার আগেই সিনেমাটি ছেড়ে দিয়েছিলেন, কারণ গল্প তাঁর মানদণ্ডে ফেল করেনি।
আর তৃতীয় ছবি ‘বড়ে মিয়া ছোটে মিয়া’, হিন্দি সিনেমার অন্যতম ব্যয়বহুল অ্যাকশন সিনেমা। এখানে দুলকারের জন্য ছিল খলনায়কের চরিত্র। কিন্তু চিত্রনাট্য পড়েই তিনি অফার ফিরিয়ে দেন। পরে দেখা যায়, প্রায় ২০০ কোটি রুপির ক্ষতির মুখে পড়ে সিনেমাটি, এক ঐতিহাসিক ব্যর্থতা।
দুলকারের এই সিদ্ধান্তগুলো শুধু তাৎক্ষণিক নয়, দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা ও কৌশলের ফসল। তিনি বিশ্বাস করেন না শুধুই নাম বা আকারে। বরং গল্প, চরিত্র এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভিত্তিতে ছবি নির্বাচন করেন। ‘সীতা রামাম’ থেকে ‘কুরুপ’—প্রতিটি সিদ্ধান্তেই আছে মেপে মেপে চলার ছাপ।
যখন একের পর এক তারকা বড় ব্যানার বা তারকাসমৃদ্ধ প্রকল্পে গিয়ে ফেঁসে যান, তখন দুলকার সালমান নিঃশব্দে গড়ে তুলছেন এক নিখুঁত এবং স্থায়ী ক্যারিয়ারের ভিত্তি।
এসএন