টলিউড মানেই এখন বড় বাজেট, প্যান-ইন্ডিয়া কনটেন্ট, গ্ল্যামার আর গ্লোবাল স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই দেখা দিচ্ছে এক বড় বাধা, মুক্তির নির্ধারিত সময়সীমা ঠিক রাখতে না পারা। একের পর এক বহুল প্রতীক্ষিত ছবি পিছিয়ে যাচ্ছে, আর সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে দর্শকের আগ্রহ, প্রযোজকের টাকা আর সিনেমার বিশ্বাসযোগ্যতা।
এত দেরির মূল কারণ কোথায়? বিশ্লেষণ করলে উঠে আসে কয়েকটি বড় দিক।
প্রথমেই আসে ভিএফএক্স। এখনকার টলিউড ছবিগুলোর ভিজ্যুয়াল অ্যাম্বিশন বিশাল। কিন্তু সেই উচ্চমানের ভিএফএক্স সময়মতো তৈরি হচ্ছে না। পরিচালকরা নিম্নমানের ভিএফএক্স ফিরিয়ে দিচ্ছেন, আবার নতুন করে করাতে হচ্ছে। ‘আরআরআর’ বা ‘কাল্কি ২৮৯৮ এডি’-এর পর দর্শকের প্রত্যাশাও বেড়েছে, তাই টলিউডও মান বজায় রাখতে চাইছে। কিন্তু এতে যে দেরি হচ্ছে, সেটাও অস্বীকার করা যায় না।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রিশুটের প্রবণতা। প্রাথমিক শ্যুট শেষ হলেও, গল্প বা আবেগ ঠিকমতো ফুটে না উঠলে আবার দৃশ্য ধারণ হচ্ছে। মান অবশ্যই বাড়ছে, কিন্তু প্রভাব পড়ছে শিডিউলে।
সবচেয়ে বিপাকে পড়ছেন প্রযোজকরা। একবার মুক্তির তারিখ ধরে যখন প্রচার শুরু হয়, তারপর তা পিছিয়ে গেলে ফের মার্কেটিং, নতুন পরিকল্পনা, খরচ বাড়তেই থাকে। আগের হাইপ হারিয়ে যায়, আবার নতুন করে দর্শকের মনোযোগ কাড়াও সহজ নয়।
এছাড়া এই পিছিয়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে পুরো ইন্ডাস্ট্রির মুক্তির ক্যালেন্ডারে। একটি বড় ছবির দেরি মানেই অন্য ছবির মুক্তির তারিখে প্রভাব, থিয়েটার বুকিং নিয়ে দ্বন্দ্ব, ডিস্ট্রিবিউশন গোলমাল, ওটিটি চুক্তির দেরি—সব মিলে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।
সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে দর্শকের বিশ্বাসে। একবার, দু’বার, তারপর বারবার মুক্তির তারিখ বদলালে দর্শক বিরক্ত হয়ে পড়েন। প্রি-রিলিজ ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসেও আঘাত লাগে।
অবশ্যই মানের প্রতি টলিউডের এই সচেতনতা প্রশংসনীয়। কিন্তু পরিকল্পনার ঘাটতি থাকলে, সেই মান ধরে রাখার প্রচেষ্টাই হয়ে উঠতে পারে সিনেমার বিরুদ্ধে বিপদ। তাই ২০২৬ সালকে ঘিরে প্রত্যাশা, এবার হবে শৃঙ্খলার বছর। মুক্তির তারিখ মানা হবে প্রতিশ্রুতি হিসেবে, আর আরেকটি ‘ডিলে ট্রেন্ড’ নয়।
এসএন