ন্যাটোর মাধ্যমে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ন্যাটোর মাধ্যমে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র এবং জোটই এই অস্ত্রের দাম দেবে। রাশিয়া যখন যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা উড়িয়ে ইউক্রেনের শহরগুলোতে জোরদার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ট্রাম্প তার নীতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিলেন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা অস্ত্র ন্যাটোতে পাঠাচ্ছি এবং ন্যাটো সেই অস্ত্রের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবে।

তারপর ন্যাটো সেগুলো ইউক্রেনকে দেবে।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ করবে। কিন্তু সেই খরচ ন্যাটো বহন করবে।

তিনি ইউক্রেনকে সরাসরি মার্কিন অস্ত্র পাঠাবেন প্রেসিডেনশিয়াল ড্রডাউন অথরিটি নামে প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে। এই ক্ষমতা প্রেসিডেন্টদের নিজস্ব অস্ত্র মজুত থেকে জরুরি ভিত্তিতে মিত্র দেশকে সহায়তা দেয়ার সুযোগ দেয়। যা ট্রাম্প এখনও ব্যবহার করেননি।

খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে নতুন করে যে অস্ত্র পাঠানো হবে তার মূল্য হতে পারে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং এতে থাকতে পারে প্রতিরক্ষামূলক প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ও আক্রমণাত্মক মাঝারি পাল্লার রকেট।

এই পদক্ষেপের আগে ট্রাম্প প্রশাসন শুধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অনুমোদিত অস্ত্রই পাঠিয়েছে। তবে এখন নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী সরাসরি অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প এর আগে ইউক্রেনে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বক্তব্যে তিনি কিয়েভের প্রতি সমর্থনও জানিয়েছেন এবং রাশিয়ার নেতৃত্বের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ট্রাম্প আরও জানান, আগামী সোমবার (১৪ জুলাই) রাশিয়াকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন। ওইদিন তিনি মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার কথা জানানে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে ট্রাম্প বারবারই বলেন, ক্ষমতায় এসে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে ফেলবেন তিনি। কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর ছয় মাস পার হলেও সংঘাত থামাতে পারেননি। তিনি বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও রাশিয়া তা কানে তোলেনি।

এ কারণে চলতি সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, পুতিন যা বলছেন তা নিয়ে আমি খুশি না। সেই সঙ্গে রাশিয়ার উপর নতুন করে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী ও আশাপশের এলকাগুলোতে আবারও ভয়াবাহ ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। একদিনে চারশ ড্রোন ও ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে মস্কো। এর মধ্যে ৩৮২টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি করেছে কিয়েভ।

এবারের হামলায় রুশ ড্রোনগুলো দিক পরিবর্তন করে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে, যা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাতে ইউক্রেনের আকাশে নেমে আসে রাশিয়ার তাণ্ডব। রাতভর কিয়েভে চালানো হয়েছে শত শত ড্রোন হামলা। চারদিক থেকে একযোগে ড্রোন ছুঁড়ে এক নতুন কৌশলের আভাস দিল মস্কো। এ হামলায় হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

হামলায় রাশিয়া ৪০০ ড্রোন ও ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে, যার মধ্যে ছিল ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইলও। অনেকগুলো ড্রোন শহর এড়িয়ে দিক পরিবর্তন করে ফিরে আসে, যা ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। যদিও ৩৮২টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন।

এই পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে মুখোমুখি বৈঠকে বসেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন সংকটসহ ইরান ও সিরিয়া বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জানান, এই আলোচনা মানেই শান্তিচুক্তির পথ খুলছে না। তিনি বলেন, এ ধরনের সংলাপ রাজনীতির চলমান প্রক্রিয়ার অংশ, যা এককভাবে কোনো সমাধান নয় বরং বৃহত্তর আলোচনার একটি ধাপমাত্র।

এদিকে ইতালির রোমে এক সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, পুতিন যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে চান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নন। একই মঞ্চে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখতে এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা উচিত। 

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা, তাপমাত্রা বাড়তে পারে সামান্য Sep 15, 2025
img
জেনে নিন ওষুধ ছাড়াই মাইগ্রেনের ব্যথা হ্রাসে সহায়ক খাবারসমূহ সম্পর্কে Sep 15, 2025
img
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে দেশি সবজি, কমাবে হৃদরোগের ঝুঁকি Sep 15, 2025
img
নড়াইল-যশোর মহাসড়কে দুর্ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রাণ হারাল ৩ Sep 15, 2025
img
বরগুনায় ইউপি সদস্যের মুরগির খামার থেকে ৬২ বস্তা সার জব্দ Sep 15, 2025
img
মালদ্বীপ প্রবাসীদের জন্য হাইকমিশনের কনস্যুলার ক্যাম্প আয়োজন Sep 15, 2025
img
ম্যানচেস্টার ডার্বিতে সিটির দাপুটে জয় Sep 15, 2025
img
মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মাঝে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ Sep 15, 2025
img
ভারী বৃষ্টিপাতে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা Sep 15, 2025
img
পদ্মা সেতুতে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন উন্মুক্ত হচ্ছে আজ Sep 15, 2025
img
কক্সবাজার স্টেডিয়ামে ভাঙচুর : ছাত্রদল নেতাসহ ৭০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা Sep 15, 2025
img
ধানের শীষই দেশের মানুষের মুক্তির পথ : আফরোজা খানম Sep 15, 2025
"বাংলাদেশকে মেনে নিয়ে আমরা রাজনীতি করছি" Sep 15, 2025
"দলের ঊর্ধ্বে উঠে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আমরা আশাবাদী" Sep 15, 2025
যেভাবে শুরু হয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা, জানালেন আলী রিয়াজ Sep 15, 2025
একদিনে ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি, চলবে আরও ৫ দিন Sep 15, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Sep 15, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Sep 15, 2025
"জাতীয় সনদ নয়, নাম হতে হবে জুলাই সনদ" Sep 15, 2025
জুলাই সনদ নিয়ে সমঝোতায় আসতেই হবে বললেন প্রধান উপদেষ্টা Sep 15, 2025