নিজেকে অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে মুখে মাস্ক পরে আজ আদালতে হাজির হয়েছিলেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। আত্মসমর্পণ করে শুনানিতে দেয়া বক্তব্যের পর ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন পান তিনি।
রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে হাজির হন অপু। বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে এজলাসে (আদালতের বিচারালয় কক্ষ) পেছন সারির বেঞ্চে বসেন। এরপর মামলার শুনানি শুরু হয়।
শুনানির আগমুহূর্তে অভিনেত্রীর নাম ধরে ডাকা হলে এজলাসে আসামির কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান অপু। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুজ্জামান সুমন বলেন, এ মামলায় অর্থ যোগানদাতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন অপু বিশ্বাস। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন। তার জামিনের কোনো সুযোগ নেই।
পরে অপুর আইনজীবী শুনানি করতে গিয়ে প্রথমে বলেন, মাননীয় আদালত, আপনি জানেন, তিনি একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। এসময় বিচারক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান তাকে থামিয়ে বলেন, না। আমি জানি না। আমি বাংলা সিনেমা দেখি না।
এরপর শুনানিতে নিজেদের বক্তব্য একে একে তুলে ধরেন অপু বিশ্বাসের পক্ষের আইনজীবী মো. মোজাফফর হোসেন জিকু, আবুল বাশার কামরুলসহ একাধিক আইনজীবী।
তারা জানান, হাইকোর্ট থেকে ২ জুন ছয় সপ্তাহের জামিন পেয়েছিলেন অপু বিশ্বাস। মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন। মামলার এজাহারে কোথাও তার নাম উল্লেখ নেই, এমনকি মামলার বাদীও হলফনামা দিয়ে ভুল স্বীকার করেছেন। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগও নেই।
তাই সহ-আসামির জামিনের দৃষ্টান্তে বা শর্তসাপেক্ষে অপু বিশ্বাসের জামিন চাওয়া হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী শুনানি চলমান রেখে জামিন আবেদন করেন।
শুনানিতে অপু বিশ্বাসকে বিচারক জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি রাজনীতি করেন? হাস্যোজ্জ্বল মুখে মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দেন অপু। এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরা এসময় বলেন, তিনি রাজনীতি না করলেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট হওয়ায় তার নেতাকর্মীসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিদেরও ইন্ধন ছিল। রাষ্ট্রপক্ষের এমন মন্তব্যে মুচকি হেসে ওঠেন অপু। বিচারককে তিনি বলেন, আমি একজন অভিনয় শিল্পী। অভিনয় করাই আমার মূল লক্ষ্য। অভিনয়ের লক্ষ্যে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো। এটা আমাদের অভিনয়েরই একটা পার্ট। রাজনীতি আমি কখনো করিনি। বুঝিও না। আমি অভিনয় করি।
এ কথা শুনে এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠেন, আপনি এমপি হতে চেয়েছিলেন।
অপু ছলছল চোখে তাদেরকে জবাবে বলেন, আমি ওই সময় খারাপ অবস্থায় ছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। আমারও তো একটা ছোট বাচ্চা আছে।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অপু বিশ্বাসের জামিন মঞ্জুর করেন। বেলা ১টা ৫ মিনিটে নারী পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে অভিনেত্রীকে গাড়িতে তুলে দেয়া হয়।
এসএন