মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত চূড়ান্ত বাণিজ্য চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। যেকোনো সময় চুক্তি সই হতে পারে। ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের পর নতুন চুক্তির লক্ষ্যে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে একটি উচ্চস্তরের আলোচনার মধ্যে এ মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বিবিসির এক প্রতিবেদন মতে, বুধবার (১৬ জুলাই) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কাছাকাছি আছি। এই চুক্তির মধ্যদিয়ে তারা (ভারত) তাদের বাজার উন্মুক্ত করে দেবে।’
একইদিন রিয়েল আমেরিকা’স ভয়েস নামে একটি সম্প্রচারমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ট্রাম্প জানান, দুই দেশের মধ্যে এখনও দর কষাকষি চলছে। ভারতকে চিঠি পাঠালেই চুক্তি হয়ে যাবে।
একই সঙ্গে ট্রাম্প যোগ করেন, ‘আমরা বিভিন্ন দেশকে চিঠি পাঠিয়ে দারুণ সব চুক্তি করব। চিঠিতে বলা থাকবে যে, আপনাদের (আমেরিকায় রফতানি করা পণ্যের উপর) ৩০ শতাংশ, ২৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ, ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। আমরা খুব সুন্দর কিছু চুক্তি ঘোষণা করব। তবে ভারতের উপর ঠিক কত শতাংশ শুল্ক চাপতে চলেছে, তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই বিভিন্ন দেশকে শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প। এরপর এপ্রিলে সেই শুল্ক ঘোষণা করে বিভিন্ন দেশের একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করেন তিনি। ওই সময় ভারতের উপর ২৬ শতাংশ শুল্কারোপের কথা জানানো হয়। তবে সেই সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়।
ট্রাম্প জানিয়ে দেন, আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের মতো শুল্ক চাপাবে। গত ৯ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকেই একে একে বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক চাপানো শুরু করেন ট্রাম্প এবং এখন পর্যন্ত ২০টিরও বেশি দেশের নাম ও শুল্কের পরিমাণ ঘোষণা করেছেন তিনি।
ট্রাম্প এখন পর্যন্ত যে দেশগুলোতে শুল্ক-চিঠি দিয়েছেন, তাতে সর্বনিম্ন শুল্ক ধরা হয়েছে ২০ শতাংশ। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। গত শনিবারই সবশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও প্রতিবেশি দেশ মেক্সিকোর উপর ৩০ শতাংশ করে শুল্ক ঘোষণা করেন তিনি। যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
নতুন করে শুল্ক ঘোষণার আগে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। এই আলোচনা গত কয়েক মাস ধরে চলছে। বাণিজ্য চুক্তির নিয়ে আলোচনা সারতে এই মুহূর্তে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে রয়েছেন।
সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে কৃষিজাত পণ্য-সহ কিছু ক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকার মধ্যে দর কষাকষি চলছে। বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বাজারে মার্কিন পণ্য পৌঁছে দিতে চান। বুধবার নিজেই সে কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে ভারত সরকার কৃষির মতো বেশ কিছু ক্ষেত্রে মার্কিন পণ্যের অবাধ আমদানি চাইছে না বলে খবরে বলা হয়েছে।
ব্লুমবার্গের বরাতে ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত চায় ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় কম হারে শুল্ক সুবিধা। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যে বাণিজ্য চুক্তি করেছে, তাতে শুল্ক হার ধরা হয়েছে ১৯ শতাংশ। ভারতের ক্ষেত্রে এটি ২০ শতাংশের নিচে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে এখনো অনড় রয়েছে ভারত। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল জানিয়েছেন, এই দুই খাত ভারতের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং অতীতেও দেশটি নিজের দুগ্ধশিল্পকে রক্ষা করে এসেছে। ফলে সম্ভাব্য চুক্তিতে এসব খাত অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
কেএন/এসএন