দুদকের পক্ষে এতো দুর্নীতির শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব না : বিচারক

২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ (বুধবার) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন শুনানির এক পর্যায়ে তিনি বলেন, দুদকের মতো সংস্থার পক্ষে এতো এতো দুর্নীতি বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব না। এছাড়া দুদক যেসব মামলা করে সেসব মামলায় শাস্তিও হয় কম। দুর্নীতি করে পাঁচ হাজার কোটি টাকার, শাস্তি হয় পাঁচ বছরের।

এদিন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আবুল বারকাতকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তাকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর ১১টা ৭ মিনিটে আদালতে তোলা হয় তাকে। আদালতে কাঠগড়ায় একটি বেঞ্চে বসেন তিনি। কাঠগড়ায় তাকে বেশ চিন্তিত দেখা যায়। তার পক্ষে জামিন চেয়ে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুর ইসলাম।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ঋণ আবেদন করে এননটেক্স গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সুপ্রভা স্পিনিং মিলস। পরে তাদের আবেদনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড লাইন মেনে সুপ্রভা স্পিনিং মিলসকে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এখানে ড. আবুল বারকাত দায়িত্বে কোনো অবহেলা করেননি। তিনি কোন নীতিমালাও ভঙ্গ করেননি।

তিনি আরও বলেন, এর আগে একই বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করে কোন দুর্নীতি হয়নি মর্মে ক্লিয়ারেন্স দেয়। এখন একই বিষয়ে নতুন করে মামলা করার বিষয়টি দ্বিচারিতা ছাড়া কিছুই না। তাই দুদক আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে যে সব এলিগেশন এনেছে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা তার (আবুল বারকাত) জামিন চাইছি।

জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ওনার কর্মচারীরা কোনো অপরাধ বা অনিয়ম করলে তার দায়িত্ব তাকেই (বারকাত) নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাই এ মামলায় তাকে জামিন দেয়ার ঘোর বিরোধীতা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

এসময় বিচারক বলেন, সোনালী ব্যাংকের পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন পাঁচ হাজার কোটি টাকা কোন টাকাই না। এরপর থেকেই পাঁচ হাজার, দশ হাজার কোটি, বিশ হাজার কোটি, পঞ্চাশ হাজার ও এক লাখ কোটি টাকা লোপাট হতে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব টাকা পাচার হয়ে চলে যায় বিভিন্ন দেশে।

বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় ট্রুথ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। যারা দুর্নীতি করেছিল তারা ওই কমিশনে গিয়ে নিজেদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দেয়। ভেবেছিলাম এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও এমন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাচার করা টাকা এই সরকার ফেরত এনে রাষ্ট্রের কাছে জমা দেবে, কিন্তু সেটি হয়নি।

এখন দুদকের মতো সংস্থার পক্ষে এতো এতো দুর্নীতি বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব না। এছাড়া দুদক যেসব মামলা করে সেসব মামলায় শাস্তিও হয় কম। দুর্নীতি করে পাঁচ হাজার কোটি টাকার, শাস্তি হয় পাঁচ বছরের।

এরপর আবুল বারকাত ও দুদক প্রসিকিউটরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জনতা ব্যাংকের এলিগেশন আরও অনেক বড় থাকার কথা। তবে সব এলিগেশনের সঙ্গেই আপনি জড়িত এটি আমি বলছি না। আপনি ধৈর্য ধরেন। ব্যাংকের বোর্ডের সহায়তায় বিদেশে অর্থ পাচার করছে। এটা নজিরবিহীন। আমাদের দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।

এরপর আবুল বারকাতের জামিন নামঞ্জুর করেন তিনি। একইসঙ্গে এ মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া আবেদনের শুনানির জন্য মামলাটি সিএমএম আদালাতে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত। পরে তাকে আদালতে কাঠগড়া থেকে হাজতখানায় নেয়া হয় তাকে।

এননটেক্স গ্রুপের নামে দুইশত সাতানব্বই কোটি আটত্রিশ লক্ষ সাতাশি হাজার দুইশত ছিয়ানব্বই টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের নামে মামলা করে দুদক। এতে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও আবুল বারকাত পরস্পর যোগসাজশে জালজালিয়াতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে এই টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। আতিউর রহমান, তার সহযোগী অন্য ব্যক্তিরা বিভিন্ন অনৈতিক কৌশলে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

গত ১০ জুলাই রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন ১১ জুলাই এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
স্বল্প পরিসরে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরছে মাইলস্টোন Jul 23, 2025
img
স্মোকড ইলিশ থেকে বাকলাভা,বাংলাদেশ-পাকিস্তানের নৈশভোজে আরও যা ছিল Jul 23, 2025
img
আমরা পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাব: নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী Jul 23, 2025
img
লিবিয়ায় ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী: আইওএম Jul 23, 2025
img
নাভ্রাতিলোভার পর সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ম্যাচ জয়ের কীর্তি গড়েছেন ভেনাস Jul 23, 2025
img
সিঙ্গাপুরের দুই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে, দুই কার্গো এলএনজি কিনছে বাংলাদেশ Jul 23, 2025
img
ঢাকায় ভারতীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল Jul 23, 2025
img
নেতানিয়াহুকে হত্যার পরিকল্পনার দায়ে ৭০ বছর বয়সী নারী গ্রেপ্তার Jul 23, 2025
img
স্থগিত হওয়া আলিম পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ Jul 23, 2025
img
সাগরে মার্কিন রণতরীকে পথ পরিবর্তনে বাধ্য করল ইরান Jul 23, 2025
img
মার্কিন রণতরীকে পথ পরিবর্তনে বাধ্য করল ইরান Jul 23, 2025
img
এক চাঁদাবাজ খেদাই, আরেক চাঁদাবাজ হাজির হয় : হান্নান মাসউদ Jul 23, 2025
img
ঢাকায় এসিসির সভায় যোগ দিচ্ছে ভারত Jul 23, 2025
img
সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের এপিএস নজরুল কারাগারে Jul 23, 2025
img
ওজন কমাতে শুরু ক্রিকেটের সাথে পথ চলা, এবার ভারতের হয়ে টেস্ট খেলছেন Jul 23, 2025
img
মাইলস্টোনের ঘটনায় ২২ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর Jul 23, 2025
img
একদিনের ব্যবধানে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম Jul 23, 2025
img
অনলাইন ট্রায়াল পুরো পরিবারকে গভীর ট্রমার মধ্যে ফেলে দেয়: নুসরাত ফারিয়া Jul 23, 2025
img
জমকালো দোতলা বাড়িতে দূতাবাস,কূটনৈতিক নম্বরপ্লেটযুক্ত চারটি গাড়ি - ৭ বছর পর জানা গেল ভুয়া Jul 23, 2025
img
সালমানকে আর দেখা যাবে না খোলা বারান্দায়! Jul 23, 2025