মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর সেপ্টেম্বরেই ঋণের খরচ কমানোর আশা দুর্বল হয়ে গেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। আর এতে করে ক্ষুব্ধ হতে পারেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি শুরু থেকেই সুদের হার দ্রুত ও বড় পরিসরে কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। খবর রয়টার্সের।
পাওয়েল জানিয়েছেন, বর্তমানে ফেডের মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। সরকারি ঋণ বা গৃহঋণের খরচ কমানো ফেডের অগ্রাধিকার নয়, যেটা ট্রাম্প বারবার চেয়েছেন। বরং প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি ও নানামুখী সিদ্ধান্তের কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, সেটি নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি সতর্ক ফেড। এজন্য অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য আরও তথ্য সংগ্রহ না করা পর্যন্ত সুদের হারে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুব কম।
আগামী ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর ফেডের পরবর্তী বৈঠকের আগ পর্যন্ত আরও দুই মাসের অর্থনৈতিক তথ্য হাতে আসবে। পাওয়েল বলেন, ‘এখনো আমরা খুব প্রাথমিক ধাপে আছি। সামনে অনেক তথ্য আসবে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখবে। তবে এখনই বলা কঠিন-সে তথ্য কতটা চূড়ান্ত বা গুরুত্বপূর্ণ হবে।’
ফেডের এই অবস্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। যেখানে এই সপ্তাহের শুরুতে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছিল, ফেড সভা শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশের নিচে। এর প্রভাবে বেড়েছে ট্রেজারি ইল্ড, আর নামতে শুরু করেছে শেয়ারবাজার সূচকগুলো। নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের দুই প্রধান সূচক-এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এবং ডাও জোন্স সামান্য পতনে দিন শেষ করেছে।
কমেরিকা ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিল অ্যাডামস বলেন, ‘চেয়ারম্যান পাওয়েল স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ফেডের হাতে কিছুটা সময় আছে পরিস্থিতি বিশ্লেষণের। সম্ভবত ডিসেম্বরের আগে সুদের হার কমার সম্ভাবনা নেই। যদি বেকারত্বের হার স্থিতিশীল থাকে এবং শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে, তাহলে আগামী মাসগুলোতে সুদের হার কমানোর পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো কঠিন হবে।’
এদিকে, ফেডের সর্বশেষ নীতিগত সিদ্ধান্তটি ৯-২ ভোটে পাস হয়েছে। তবে ৩০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দু’জন ফেড গভর্নর এর বিরুদ্ধে ভিন্নমত দিয়েছেন, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঐক্যমত্যের সংস্কৃতিতে ভিন্ন এক বার্তা দিচ্ছে।
ট্রাম্প এর আগেও ফেড চেয়ারম্যানকে ‘অতি ধীর’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। তবে পাওয়েল পাল্টা জবাবে বলেন, ঋণের খরচ কমাতে গিয়ে ফেড সময়ের আগেই পদক্ষেপ নিতে চায় না যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আবার সময়ের অনেক পরে সিদ্ধান্ত নিলে বেকারত্বও বাড়তে পারে, যা মার্কিন অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি।
ফেডের হিসাব মতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে প্রায় ২.৫ শতাংশে পৌঁছেছে। আমদানি করা বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে এবং তা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন পাওয়েল। জুন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ইঙ্গিত মিলেছে, বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) জুন মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করবে মার্কিন সরকার। আর শুক্রবার আসছে জুলাই মাসের কর্মসংস্থান প্রতিবেদন। ফেডের নীতিনির্ধারকরা এসব তথ্যকে কেন্দ্র করেই সেপ্টেম্বর বৈঠকে সুদের হার কমানো নিয়ে আলোচনায় বসবেন।
এর আগে বুধবার মার্কিন সরকার জানিয়েছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা ভালো হয়েছে। তবে এই প্রবৃদ্ধির মূল কারণ হলো আমদানি হ্রাস, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বরং বিগত আড়াই বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীর গতিতে বেড়েছে।
কেএন/এসএন