রোহিঙ্গা গ্রাম বলে কিছুই অবশিষ্ট নেই!

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পর সেখানে ব্যাপকভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে দেশটির সরকার। গ্রামগুলোতে পুলিশ ব্যারাক, সরকারি ভবন ও শরণার্থী ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের পুরনো গ্রাম বলে কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই।

সম্প্রতি স্যাটেলাইটের ছবি ও রিপোর্টারদের সরেজমিন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এমনটি দাবি করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

স্যাটেলাইট চিত্র থেকে বিবিসি জানায়, কমপক্ষে চারটি রোহিঙ্গা গ্রামকে পুরোপুরি সরকারি অবকাঠামোতে রূপান্তর করা হয়েছে।

এর আগে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ইউরো এশিয়া রিভিউ ২০১৮ সালের মার্চের শুরুতে জানায়,২০১৭ সালের শেষ থেকে মিয়ানমার সরকার ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কমপক্ষে ৪৫৫টি গ্রামের সব অবকাঠামো ও ফসলের ক্ষেত ধ্বংস করে দেয়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে অ্যামনেস্টির সবশেষ গবেষণায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বহু  গ্রাম জ্বালিয়ে ও  বুলডোজারে  গুড়িয়ে দেওয়ার আলামত উঠে আসে। ফেব্রুয়ারিতে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী অর্ধশতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ওই বছর মার্চের শুরুতে নতুন করে অ্যামনেস্টির দেওয়া বিবৃতি থেকে অন্তত  ৩টি সামরিক ঘাঁটি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ চলমান থাকার কথা জানা যায়। এবার বিবিসির প্রতিবেদনেও গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে সরকারি অবকাঠামো নির্মাণের প্রমাণ উঠে এলো।

বিবিসির খবরে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।সরকারি একটি গাড়ি বহরে করে সংবাদকর্মীদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।তবে তাদের কেউই পুলিশের অনুপস্থিতিতে কোনো ভিডিও ধারণ বা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারেননি।যদিও সবাই খালি চোখেই দেখতে পারছিলেন কিভাবে রোহিঙ্গা বসতিগুলো থেকে তাদের চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে।

মিয়ানমারের সরকারি কর্তৃপক্ষ হ্লা পো কং নামের একটি ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যায় সংবাদকর্মীদের।সেখানে ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার।নিজ এলাকায় ফেরত যাওয়ার আগে দুই মাস এখানে কাটাতে হবে রোহিঙ্গাদের।এক বছর আগে বানানো এই ক্যাম্পটির অবস্থা এখনই শোচনীয়।কমিউনিটি টয়লেটগুলো এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে।হো রি তু লার এবং থার জায় কোন নামের দুইটি রোহিঙ্গা গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস করে এই ক্যাম্পটি তৈরি করা হয়।

বিবিসির পক্ষ থেকে ওই ক্যাম্পের প্রশাসকের কাছে গ্রামগুলো ধ্বংসের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল।তিনি দাবি করেন, কোনো গ্রাম ধ্বংস করা হয়নি।কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি দেখানোর পর তিনি বলেন, এই চাকরিতে তিনি নতুন।তাই সব তথ্য তিনি জানেন না।

এরপর সংবাদকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয় কেইন চং নামের একটি স্থানান্তর ক্যাম্পে।যেখানে জাপান ও ভারত সরকারের অর্থায়নে ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী আবাসন তৈরি করা হয়েছে।কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ম্যার জিন নামের একটি রোহিঙ্গা গ্রাম সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়ে স্থানান্তর ক্যাম্পটি তৈরি করা হয়েছে।এই গ্রামটি মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের একটি ব্যারাকের খুব কাছাকাছি।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পুলিশ ম্যার জিন গ্রামটি ধ্বংসের কথা স্বীকার করেছেন।

মং ডু শহরের খুব কাছেই ম্যেও থু জি নামের অন্য একটি গ্রামে প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা বসতি ছিল।২০১৭ সালে গ্রামটিতে ব্যাপকভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি।আবার রাখাইনের গ্রামগুলো ঐতিহ্যগতভাবেই গাছের প্রাচুর্য থাকে।এবার ম্যেও থু জি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় কোনো গাছের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।তবে সেখানে পুলিশ ব্যারাক আর বিশাল বিশাল সরকারি কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে।

এরপর ইন ডিন গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় সংবাদকর্মীদের।এই গ্রামে ১০ জন রোহিঙ্গাকে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করেছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।গ্রামটির এক-চতুর্থাংশ অধিবাসী রোহিঙ্গা মুসলমান এবং বাকিরা ছিল বৌদ্ধ।কিন্তু বর্তমানে সেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাননি সাংবাদিকরা।রোহিঙ্গাদের বাড়ির আশেপাশে যে জায়গাগুলোতে আগে গাছ ছিল, সেখানে এখন নতুন করে কাঁটাতারের বেড়া দেখা গেছে।স্থানীয় বৌদ্ধরা জানিয়েছেন, তারা কোনোভাবেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের তাদের আশেপাশে বসবাস করতে দেবেন না।

 

টাইমস/এমএস 

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নোয়াখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত ড্রাইভার গ্রেপ্তার Nov 05, 2025
img
অতিরিক্ত বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন Nov 05, 2025
img
ভারতে কেরালা রাজ্যে দেবমূর্তির সাড়ে ৪ কেজি সোনা চুরি, পুরোহিতসহ গ্রেপ্তার ৩ Nov 05, 2025
img
এই অন্ধকার মুহূর্তে ‘নিউ ইয়র্ক হবে আলো’: জোহরান মামদানি Nov 05, 2025
img
আশুলিয়ার ঘটনার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে Nov 05, 2025
img
হানিয়ার আমিরের প্রেম নিয়ে নতুন গুঞ্জন! Nov 05, 2025
img
হন্ডুরাসের জালে ৭ গোল ব্রাজিলের Nov 05, 2025
img
সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিল বিভাগে আর্জি বিএনপির Nov 05, 2025
img
স্কুলে জামায়াতের প্রচারণা, প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি Nov 05, 2025
img
ঢাকায় পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে ১২০ টাকা Nov 05, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শেষ করেছে বিএনপি Nov 05, 2025
img
আওয়ামী লীগের আলোচিত নেত্রী ঝুমা গ্রেপ্তার Nov 05, 2025
img
ফেসবুকে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করলেন রিজভী Nov 05, 2025
img
আবারও আইনি জটিলতায় সালমান খান Nov 05, 2025
img

রুবাবাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট

সমালোচনার মুখে ফেসবুক থেকে পোস্ট সরিয়ে নিলেন ইরফান Nov 05, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরলেও নির্বাচন হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই: ব্যারিস্টার রুহুল Nov 05, 2025
img
শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ, গানের জগতে শৃঙ্খলার ডাক ইমনের Nov 05, 2025
img
বিশ্বকাপ জেতা আমার জন্য কোনো ‘স্বপ্ন’ নয় : রোনালদো Nov 05, 2025
img
অ্যানিমেশনে ফিরছে বাহুবলী Nov 05, 2025
img
সুরের মূর্ছনায় বোস্টন মাতালেন বাপ্পা মজুমদার Nov 05, 2025