ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিলো ইসরায়েল। ১২ দিনের বিমান হামলায় তারা ইরানের পরমাণু স্থাপনা এবং বিজ্ঞানীদের শেষ করতে চাইলেও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইসরায়েলের তালিকাভুক্ত শতাধিক বিজ্ঞানীর মধ্যে ১৫ জনের বেশি জীবিত রয়েছেন এবং তারা এখন তেহরানের নিরাপদ জায়গায় লুকিয়ে আছেন।
নিরাপত্তাজনিত কারণেই তারা বাসভবন ও বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন বলেও জানা গেছে। সিনিয়র এক ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিজ্ঞানীদের পরিবারসহ তেহরানের নিরাপদ ভিলা এবং দেশের উত্তর উপকূলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তেহরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা আগে পারমাণবিক কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন, তাদের পরিবর্তে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যাদের পারমাণবিক প্রোগ্রামের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
দ্য টেলিগ্রাফের কাছে ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইরানের নিহত বিজ্ঞানীদের কাজ গ্রহণ করতে প্রস্তুত নতুন গবেষকরা। এই পরিস্থিতিকে তারা ‘মারা যাওয়া মানুষের হাঁটাহাঁটি’র সঙ্গে তুলনা করছেন। একইসঙ্গে তারা জানাচ্ছেন, যে গবেষকরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছেন তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত জোরদার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪ জুন জানান, ইরান এখনো তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির পরিদর্শন মেনে নেয়নি বা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ বন্ধ করেনি। তিনি বলেন, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পর ইরানের পারমাণবিক প্রোগ্রাম স্থায়ীভাবে পিছিয়ে গেছে, তবে তারা হয়তো অন্য কোথাও থেকে আবার শুরু করতে পারে।
সিএসবিএস নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বি-২ বোমারু বিমান ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। প্রত্যেক বিমানে দুটি করে ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা (GBU-57 Massive Ordnance Penetrators) ছিলো, যা অত্যন্ত ভারী এবং শুধুমাত্র বি-২ বিমানে নিক্ষেপ করা যায়।
ফোর্দো ইরানের একটি প্রধান উচ্চমানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি কেন্দ্র, যা পর্বতের নিচে প্রায় ৩০০ ফুট গভীরে অবস্থিত। এছাড়া, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান নামের আরও দুই পারমাণবিক স্থাপনাতেও যুক্তরাষ্ট্র হামলা করে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আশেপাশের এলাকায় কোনো অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয়তা দেখা যায়নি। ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এই হামলার সত্যতা স্বীকার করলেও বলেছে, হামলা তাদের পারমাণবিক উন্নয়নে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার দাবি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক প্রোগ্রাম দুই বছর পিছিয়ে গেছে, যদিও তেহরান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানের পার্লামেন্ট সদস্য মাহদী মোহাম্মাদি বলেন, ‘ইরানের দৃষ্টিকোণ থেকে অপ্রত্যাশিত কিছুই ঘটেনি। তারা কয়েক রাত ধরে ফোর্দো সাইটে হামলার প্রত্যাশায় ছিলেন এবং সেখানকার কর্মীরা আগেই সরে গিয়েছিলো। হামলা হলেও মারাত্মক কোনো ক্ষতি হয়নি।’
এসএন