স্বয়ংক্রিয় ‘খুনে রোবট’ হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে স্বচালিত একটি অস্ত্র, যা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাছাই করতে পারে এবং লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে। গত কয়েক বছরে বুদ্ধিযুক্ত সমরাস্ত্র অস্ত্র তৈরিতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।
স্বচালিত অস্ত্র, সমরাস্ত্রের তৃতীয় প্রজন্ম। অস্ত্রের ক্ষেত্রে এক নতুন বৈপ্লবিক ধারণা। স্বয়ংক্রিয় এই অস্ত্রকে আধুনিক যুদ্ধের পরিস্থিতির উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। বর্তমানে এই অস্ত্র নিয়ে এখন নানা আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
গুগলের উচ্চপদস্থ সাবেক ইঞ্জিনিয়ার লরা নোলান হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, “নতুন প্রজন্মের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রগুলি বা ‘খুনি রোবট’ ভুলক্রমে যুদ্ধ কিংবা গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বসতে পারে। খবর: দ্যা গার্ডিয়ান
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অধীনে গুগলের স্বয়ংক্রিয় বোম্বার ড্রোন বা খুনে ড্রোন তৈরির প্রজেক্টে কাজ করা থেকে লরা নোলান পদত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র বা খুনে রোবট তৈরির বিরোধিতা করে আসছেন। তার দাবি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বয়ংক্রিয় খুনে রোবটগুলিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
নোলান বলেছেন, আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে কেমিক্যাল ওয়াপনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই রকম চুক্তির মাধ্যমে, মানুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এমন সব খুনে রোবটের ব্যবহারও বেআইনি ঘোষণা করতে হবে।
তিনি বলেন, ড্রোনগুলিকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, কিন্তু স্বয়ংক্রিয় খুনে রোবটগুলো এমন ধ্বংসলীলা শুরু করতে পারে, যা করার জন্যে তা তৈরি করা হয়নি। একটি অঞ্চলে কতগুলি খুনে রোবট মোতায়েন করা হবে, তার উপর হতাহতের পরিমাণ নির্ভর করবে।
তবে, আমেরিকার সামরিক বাহিনীর জন্য স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র তৈরি করছে গুগল, এমন কোনো দাবি তিনি করেননি।
‘স্টপ কিলার রোবট’ প্রচারণা দলের সদস্য নোলান স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্রের বিপদ সম্পর্কে জাতিসংঘের কূটনৈতিকদেরকে নিউ ইয়র্ক ও জেনেভাতে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এর ফলে অনেক বড় দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটতে পারে, কারণ এই জিনিসগুলি (খুনে রোবট) এক সময় অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করবে। আর এ কারণেই উন্নত মারণাস্ত্রের উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকা খুব জরুরি। অন্যথায় এগুলিকে নিষিদ্ধ করতে হবে, কারণ এসব মেশিন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়না এবং এগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।”
২০১৭ সালে ডাব্লিনের ত্রিনিটি কলেজ থেকে কম্পিউটার সাইন্সে গ্রাজুয়েট করা নোলানকে গুগল কর্তৃপক্ষ ‘প্রজেক্ট ম্যাভেন’এ নিয়োগ করেছিল। চার বছর কাজ করার পর তিনি এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির আয়ারল্যান্ডের অফিসে উচ্চপদ লাভ করেছিলেন।
প্রজেক্টে তার কাজ ছিল আমেরিকার সামরিক বাহিনীর জন্য ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কর্মকর্তাদের দিয়ে ফুটেজ থেকে মানুষ চিহ্নিত করার বদলে কাজটি যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায় সেই উদ্দেশ্যে নোলান ও তার দল কাজ করছিলেন। পরবর্তীতে তিনি স্বয়ংক্রিয় বোম্বার ড্রোন তৈরিতে সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানান এবং পদত্যাগ করেন।
এ বছরের মার্চে গুগলের ৩,০০০ কর্মী উক্ত প্রজেক্টের বিরুদ্ধে পিটিশন দাখিল করলে প্রতিষ্ঠানটি ম্যাভেন প্রজেক্ট থেকে পিছিয়ে আসে।
ওহিও স্ট্যাট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিয়ার ব্রাউম্যুলার গেল ২০০ বছরের যুদ্ধের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, “যুদ্ধ কত বড় হুমকি, সেটা আমরা সত্যিই উপলব্ধি করতে পারছি না- অন্তত ধারণা করে সেটা বোঝা সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “যে উত্তেজনা গত একশ বছরে দু’টি বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত করেছে সেটি এখনও বিদ্যমান। কিছুই বদলায়নি এবং আমি এ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত।”
বর্তমান বিশ্বের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মারণাস্ত্র সমূহ
এএন-২ অ্যানাকোন্ডা গানবোট: আমেরিকার তৈরি গানবোটটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অস্ত্রসজ্জিত সামরিক জলযান, যা স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম। মানুষের কোনো রকম সহায়তা ছাড়াই এটি দীর্ঘ সময় ধরে অপারেশন চালিয়ে যেতে পারে।
টি-১৪ আর্মাটা ট্যাংক: রাশিয়ার তৈরি এই ট্যাংকটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। এটি মানুষের সাহায্য ছাড়াই প্রতিপক্ষের গোলার জবাব দিতে সক্ষম। খবর: দ্যা গার্ডিয়ান ও দ্যা স্ট্যান্ডার্ড
টাইমস/এনজে/জিএস