ক্যান্সার পরীক্ষা হবে ১০ মিনিটে

অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক ১০ মিনিটের একটি পরীক্ষা আবিষ্কার করেছেন যাতে সহজেই মানব দেহের যেকোন স্থানে ক্যান্সারের অস্তিত্ব সনাক্ত করা যাবে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের গবেষণা থেকে এ পরীক্ষা আবিষ্কার করা হয়েছে।

নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পানিতে রাখার পর ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠন করে। নতুন এই পরীক্ষার মাধ্যমে এই স্বতন্ত্র কাঠামো চিহ্নিত করা যাবে, যাতে প্রচলিত পদ্ধতি থেকে আরও সহজে ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব হবে।

প্রফেসর ম্যাট ট্রু বলেন, নতুন এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তসহ যেকোন টিস্যুতে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ক্যান্সার সনাক্ত করা যাবে। এই গবেষণার ফলে সাশ্রয়ী ও সহজে বহনযোগ্য ক্যান্সার সনাক্তকরণ ডিভাইস আবিষ্কার করা যাবে।

এই গবেষণার ফলাফল একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, যা ক্যান্সার সনাক্ত করার ক্ষেত্রে একটি ‌‌‘গেইম চেঞ্জার’ হতে পারে- বলেছেন সহযোগী গবেষক আবু সিনা।

ক্যান্সার একটি জটিল রোগ। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং টেস্ট রয়েছে। ক্যান্সার সনাক্ত করতে এখনও সর্বজনীন কোনো পরীক্ষা আবিষ্কৃত হয়নি। কেবল লক্ষণ দেখা দিলেই মানুষ ক্যান্সার পরীক্ষা করতে যায়। তাই বিশ্বব্যাপী গবেষকরা ক্যান্সার সনাক্তকরণের সহজ পন্থা আবিষ্কার করতে প্রতিনিয়ত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ‘ক্যান্সার সিইইকে’ নামে একটি রক্ত পরীক্ষা উদ্ভাবন করেছেন, যা আট ধরনের সাধারণ ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারবে।

এদিকে নতুন আবিষ্কৃত ১০ মিনিটের এই ক্যান্সার পরীক্ষা এখনও মানব দেহে প্রয়োগ করা হয়নি। এটা নিয়ে এখনও আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

গবেষকরা বলেন, এই গবেষণায় ২০০টি টিস্যু ও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধভাবে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ গবেষণায়, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট, অন্ত্র ও লিম্ফোমা ক্যান্সার সনাক্ত করা হয়েছে, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এ পরীক্ষা দ্বারা ক্যান্সার সনাক্ত করা যাবে বলে গবেষকদের বিশ্বাস।

ক্যান্সার সুস্থ কোষের ডিএনএ, বিশেষ করে মলিকিউলাস বিভাজন পরিবর্তন করে। নতুন এ পরীক্ষায় পানি বা এ জাতীয় জলীয় দ্রবণে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ডিএনএ-এর পরিবর্তিত কাঠামো সনাক্ত করা যাবে। গবেষণায় একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে দেখা যায়, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের ডিএনএর খন্ডগুলো পানিতে থ্রিডি-ডাইমেনশনাল কাঠামোতে পরিণত হয়েছে।

গবেষকরা মনে করছেন, এই পরীক্ষা গ্রামীণ ও অনুন্নত অঞ্চলের ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ এ পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটা খুবই সাধারণ ও সাশ্রয়ী। এতে খুব বেশি উপকরণ লাগে না।

তাছাড়া ক্যান্সার সনাক্তের পাশাপাশি এর নিরাময় ও চিকিৎসায় এ পরীক্ষার সম্ভাব্যতা নিয়ে এই গবেষণাদল কাজ করছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: