গভীর রাতে শোনা যায় কাশ্মীরি তরুণদের আর্তচিৎকার

জম্মু-কাশ্মীরে তরুণদের ওপর ভারতীয় সেনাদের নির্যাতনের মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতেই এই বেপরোয়া নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে স্থানীয়রা বলছেন। বার্তা সংস্থা  এএফপির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কাশ্মীরি তরুণদের ওপর চালানো ভারতীয় সেনাদের ভয়াবহ চিত্র।

গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা দেয়ার ধারা ৩৭০ বাতিল করে ভারত সরকার। এতে জম্মু-কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত হয় পড়ে। জম্মু-কাশ্মীরকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করেছে ভারত। এরপর থেকেই নৃশংস ও বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে কাশ্মীরিদের ওপর।

ভারতীয় সেনাদের নির্যাতনের শিকার সোফিয়ান জেলার হিরপোরা গ্রামের ২৬ বছর বয়সী আবিদ খান।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘গত ১৪ আগস্টের ঘটনা। ভারতীয় সেনারা আমার ভাই ও আমাকে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়। এরপর দুজনের চোখ বেঁধে ফেলে। ঠিক রাস্তার পাশেই আমার ভাইকে বৈদ্যুতিক শক দেয়। মধ্যরাতে ভাইয়ের আর্তচিৎকার শুনে আমাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে।’

এ সময় তার হাত, পা ও নিতম্বে নির্যাতনের দাগ দেখাচ্ছিলেন এই তরুণ। চৌগাম সেনাক্যাম্পের কাছেই সেনারা তাকে নগ্ন করে হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়েছে।

আবিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের রিয়াজ নাইকোকে আমন্ত্রণের অভিযোগ করেন ক্যাম্পের মেজর। সম্প্রতি বিয়ে করেছেন ওই কাশ্মীরি তরুণ।

আবিদ বলেন, ‘অভিযোগ সত্যি না বলে বারবার আমি অনুরোধ করতে লাগলাম। তখন তারা আমার পুরুষাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেয়। একজন সেনা বলেন- আমি তোমাকে নিবীর্য করে দেব। ভোরে যখন তারা আমাকে ছেড়ে দেয়, তখন আমার দাঁড়ানোর কোনো শক্তি ছিল না।’

১০ দিন একনাগারে বমি করে গেছেন তিনি। ২০ দিন পর হাঁটতে সক্ষম হয়েছেন।

‘আমি ঠিকমতো খেতে পারি না। আমার স্ত্রী যে কক্ষে ঘুমায়, সেখানে আমি যেতে পারি না। এমন নির্যাতনের চেয়ে বুলেট দিয়ে আমাকে মেরে ফেললেই পারত তারা।’

ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে কোনো নিপীড়ন চালায়নি বলে দাবি করেছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া একই দাবি করে বলেন, জনবান্ধব ও পেশাগতভাবে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে। কাজেই সেখানে নৃশংসতার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন।

সেনাক্যাম্প থেকে প্রায়ই মধ্যরাতে মানুষের আর্তচিৎকার শুনতে পান বলে জানাচ্ছেন হিরপোরা গ্রামের লোকজন। এই গ্রামের তিন বাসিন্দা জানান, তারা সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েছেন।

এছাড়াও বিভিন্ন গ্রামের দুই ডজন তরুণ নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। সেনাবাহিনী বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে পরিচয়পত্র ও মোবাইল নিয়ে নেয়। এর পর সেগুলো ফিরে পেতে সেনাক্যাম্পে রিপোর্ট করতে বলা হয় তরুণদের।

২১ বছর বয়সী এক কাশ্মীরি বলেন, ২৭ আগস্টের পর পাহনো ক্যাম্পে তিনবার রিপোর্ট করেছেন তিনি। কিন্তু প্রতিবারই নির্যাতিত হয়েছেন।

এএফপিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই যুবক নির্যাতনে তার আহত হওয়ার ছবি দেখিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খাবার সরবরাহের অভিযোগ করেন এক সেনা কর্মকর্তা। এরপর তথ্যের জন্য অর্থ সাধে তাকে। আরেকবার বিদ্রোহে যোগ দেয়া সাবেক এক সহপাঠীকে নিয়ে জেরার মুখোমুখি হন তিনি।

তিনি বলেন, অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে একটি অন্ধকার কক্ষের ভেতর তারা আমাকে বৈদ্যুতিক শক দেয়। এ সময় হাতে নির্যাতনের ক্ষত দেখান এ তরুণ।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: