বিভিন্ন সমস্যার কারণে মানুষের ঘুম কম হতে পারে। আবার কখনো কখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গেও যায়। কখনো অনেকক্ষণ ঘুমের উদ্দেশ্যে বিছানায় শুয়ে থাকলেও ঘুম আসে না। এসব সমস্যা যদি দু-একদিনের জন্য হয়, তাহলে এটাকে নিদ্রাহীনতা ধরা হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই একই সমস্যাগুলো একটা লম্বা সময় ধরে কাউকে ভোগালে বুঝে নিতে হবে তিনি নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন।
এই নিদ্রাহীনতা এক মারাত্মক ব্যাধি। ২০১২ সালে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে উপস্থাপিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নিদ্রাহীনতার রোগীরা অন্যদের তুলনায় স্ট্রোকের (পক্ষাঘাতের) দ্বিগুণ ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষকেরা বলছেন, নিদ্রাহীনতা বাড়তে থাকলে ভুক্তভোগীর রক্তচাপও বাড়তে থাকে, যার ফলে একসময় তার রক্তনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
তাই আসুন জেনে নিই নিদ্রাহীনতা দূর করার কয়েকটি উপায়-
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠুন
সারা সপ্তাহে যদি ঘুম কম হয় তাহলে ছুটির দিন অনেক বেশি ঘুমাতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আপনি যদি নিদ্রাহীনতায় ভোগেন তাহলে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ফলে আপনার শরীর একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে আর নির্দিষ্ট সময়ে আপনি ঘুমানোর তাড়নাও অনুভব করতে শুরু করবেন।
অ্যালকোহল, নিকোটিন, ক্যাফেইন প্রভৃতি ত্যাগ করুন
ক্যাফেইনের প্রভাব কয়েক ঘণ্টা অব্দি থাকে, এমনকি ২৪ ঘণ্টাও স্থায়ী হতে পারে। সুতরাং এটি খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার ঘুমকে প্রভাবিত করবে। অ্যালকোহল পানের পর কয়েক ঘণ্টা আসক্তি জন্ম নিলেও পরবর্তী সময়ে এটি আপনার সারারাত নির্ঘুম কাটাবার কারণ হয়ে দাড়ায়। তাছাড়া নিকোটিনের মতো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পদার্থও আমাদের ঘুম নষ্ট করে দেয়। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
নিয়মিত শরীরচর্চা ঘুমের গুণগত মানের উন্নয়ন ঘটায়। তবে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরচর্চা করলে তা শরীরে এক ধরণের উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে শরীরচর্চা না করাই ভালো। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত তিন ঘণ্টা আগে শরীরচর্চা শেষ করতে হবে।
বিছানায় কম সময় কাটান
বিছানা ঘুমানোর জায়গা, সেখানে অযথা সময় কাটাবেন না। প্রয়োজন ছাড়া বিছানায় না শোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিছানায় শুয়ে টিভি দেখা, মোবাইল ঘাটাঘাটি করা, পড়াশুনা করা প্রভৃতি অভ্যাস ত্যাগ করুন।
ঘুমাতে যাবার আগে কিছু খাবেন না
ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে কিছু খাবেন না বা পান করবেন না। কারণ এটি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে চালু রাখবে, যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোর জন্যে যথেষ্ট। তাছাড়া ঘুমাতে যাবার পূর্বে খুব বেশি কিছু পান করলে প্রস্রাবের চাপে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
শোবার ঘরের পরিবেশ আরামদায়ক করুন
অনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা, আলো ও শব্দ ঘুমের শত্রু। তাই শোবার ঘরের আলো, তাপমাত্রা ও শব্দ নিয়ন্ত্রিত হলে ভালো হয়। শোবার জন্য আরামদায়ক বিছানা ব্যবহার করুন।
বিছানায় শুয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না
বিছানায় শুয়ে শুয়ে দুশ্চিন্তা করা মানুষের বদভ্যাস। পারতপক্ষে বিছানায় শুতে যাবার পূর্বেই যা ভাবার ভেবে নিন। বিছানায় শুয়ে একদম কিছু না ভাবার চেষ্টা করুন। কারণ দুশ্চিন্তা আমাদেরকে জাগিয়ে রাখে।
মানসিক চাপ কমিয়ে নিন
বিছানায় যাবার পূর্বে মানসিক চাপ কমিয়ে নিতে হবে। বিভিন্ন উপায়ে মানসিক চাপ কমানো যায়। এক্ষেত্রে মেডিটেশন একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডিডটকম।
টাইমস/এনজে/জিএস