ছেলের জানাজা পড়ার ৫ মিনিট সময় পেলেন না: ভিসিকে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম প্রকাশ্যে আসেন।

এ সময় ভিসি ভবনের সামনে তাকে প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ রেখে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে থাকেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

আবরার হত্যার ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কেন তিনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে আসেননি, কেন আবরার ফাহাদের জানাজায় উপস্থিত হননি, কেন ক্যাম্পাসে দাঙ্গা পুলিশ চড়াও হলো একের পর এক প্রশ্ন করে ভিসির কাছে উত্তর জানতে চান শিক্ষার্থীরা।

এ সময় ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বুঝানোর চেষ্টা করেন, তাদের সান্ত্বনা দেন। কাউকে বুকে জড়িয়ে, কাউকে নাম ধরে কাছে ডেকে আবার কাউকে অভিভাবক হয়ে কিছুটা শাসনের সুরে শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

ভিসি বলেছেন, ‘আমি তোমাদের অভিভাবক, তোমরা আমার সন্তান। আবরারের সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

এ কথা শোনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা ভিসিকে বলেন, ‘এটা একটা খুন, আপনাকে স্বীকার করতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, ‘তোমাদের সব দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তোমাদের প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজনের সাথে বসে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তোমরা আলটিমেটাম তুলে নাও।’

এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আপনার ছেলেকে (আবরার ফাহাদ) হত্যা করা হলো আর আপনি জানাজা পড়ার মতো পাঁচ মিনিট সময় পেলেন না কেন?’

উত্তরে ভিসি বলেন, তিনি ওই সময় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীসহ অনেকের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের একজন ভিসিকে বলেন, ‘স্যার, আপনার কাছে শিক্ষার্থীদের অনেক প্রশ্ন। দু-একজন প্রশ্ন করবে, কিন্তু এসব প্রশ্ন উপস্থিত সবার।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘প্রতিনিধি গেলেও যা বলবেন তা মিডিয়ার সামনে করতে হবে, বলতে হবে।’

এ সময় ভিসি বলেন, ‘এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না। আমি বলছি নীতিগতভাবে তোমাদের সব দাবি মেনে নিয়েছি। সব সমস্যার সমাধান তার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সরকারের সাথে আলোচনার প্রয়োজন আছে।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শান্ত হলে ভিসি বলেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তারা দেশের বাইরে আছেন। সেখান থেকে তারা যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন আমি তা পালন করছি। আমি তোমাদের দাবিগুলো দেখেছি। এসব নিয়ে তোমাদের শিক্ষকদের সাথে কথা হয়েছে। আমি সব দাবি মেনে নিয়েছি।’

আবরার হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৭ দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। হত্যার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ও মর্মাহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটার মধ্যে উপাচার্য সশরীরে এসে এ বিষয়ে জবাবদিহি না করলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। এরপরই সন্ধ্যা ছয়টার পর উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবি:

১. খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের শনাক্ত করে সবার ছাত্রত্ব আজীবন বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

৩. দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে।

৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি, তা তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে আজ বিকাল ৫টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে। একই সঙ্গে ডিএসডব্লিউ স্যার কেন ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করেছেন, এ বিষয়ে তাকে আজ বিকাল ৫টার মধ্যে সবার সামনে জবাবদিহি করতে হবে।

৫. আবাসিক হলগুলোতে র‍্যাগের নামে ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনকে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে আহসানউল্লা হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের আগের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল ১১ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখ বিকাল ৫টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।

৬. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখ বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।

৭. মামলা চলাকালে সকল খরচ এবং আবরারের পরিবারের সকল ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এশিয়া কাপ জিতেনি বাংলাদেশ গুগোল করে নিশ্চিত হলেন ট্রট Sep 16, 2025
img
ড. ইউনূস ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনষ্ট হবে : রাশেদ খান Sep 16, 2025
img
ডাকসুর ভোট ম্যানুয়ালি গণনার জন্য উমামার লিখিত আবেদন Sep 16, 2025
img

মাসুদ সাঈদী

জনগণের ভালোবাসা অর্জন করুন, তাহলে নির্বাচন বর্জনের দরকার হবে না Sep 16, 2025
img
আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ Sep 16, 2025
img
আগস্টে ৪৯ মামলায় জড়িত ৩১১ দুর্নীতিবাজ Sep 15, 2025
img
১৫ কেজির কোরাল মাছ বিক্রি ১৮ হাজারে Sep 15, 2025
img
শ্রীলঙ্কার সামনে হংকংয়ের ১৫০ রানের চ্যালেঞ্জ Sep 15, 2025
img
নিকুঞ্জে নাগরিক জাগরণ: হারানো শান্তি ফিরে পাওয়ার গল্প Sep 15, 2025
img
সুপার ফোরে খেলবে বাংলাদেশ, আত্মবিশ্বাসী কোচ Sep 15, 2025
img
ম্যাচের আগে বাংলাদেশের প্রশংসায় জনাথন ট্রট Sep 15, 2025
img
অসুস্থ অমিতাভকে ২০০ জন ৬০ ব্যাগ রক্ত দিয়েছিলেন Sep 15, 2025
img
অতিরিক্ত ৬ বছরের কারাভোগ শেষে ভারতে ফিরলেন রামাতা Sep 15, 2025
এশিয়া কাপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, সুপার ফোর নিশ্চিত কার? Sep 15, 2025
img
আলোচনা ভেস্তে দিতেই দোহায় হামলা : কাতারি আমির Sep 15, 2025
img
তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহী চীন, পাঠাচ্ছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল Sep 15, 2025
img
ভাঙ্গায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, ক্ষতিগ্রস্ত ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল Sep 15, 2025
img

কাতারে হামলা

নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী Sep 15, 2025
img
দেশবাসী আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন : জামায়াত সেক্রেটারি Sep 15, 2025
img
লেভেল ফোর কোচিং শেষ করলেন মঞ্জু Sep 15, 2025