দৃষ্টিনন্দন আলাদিন্স পার্ক

আধুনিক এই নগর জীবনে মানুষের ব্যস্ততার শেষ নেই। খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো নেই কোনো স্থান। মানুষের এই যান্ত্রিক জীবনকে কিছু সময়ের জন্য ভুলিয়ে দিতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, উদ্যান ইত্যাদি। তেমনি একটি পার্ক ময়মসসিংহের আলাদিন্স পার্ক।
আলাদিন্স পার্কটি অবস্থিত ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের লালমাটির পাহাড়ি এলাকার বেতবাড়ি গ্রামে। পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে ২০১০ সালে।
প্রায় ২০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে আলাদিন্স পার্ক। প্রথমেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন পাথরে মোড়ানো আলাদিন্স পার্কের বিশাল ফটক। শ্বেত ও মার্বেল পাথরে মোড়ানো ফটকের সামনে দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা। প্রধান ফটক অতিক্রমের পর বিশাল গুহা পেরিয়ে সামনে এগোতেই চোখে পড়বে সারি সারি তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে।
ঘন-সবুজের ছায়া ঘেরা শীতল পরিবেশের আঁকাবাঁকা পথের ফাঁকে ফাঁকে শ্বেত পাথরের মনকাড়া সব ভাস্কর্য। লেকের উপর গড়ে তোলা ছুঁ ছুঁ টিলায় উঠে কিংবা প্যাডেল বোটে লেকের বুকে ভেসে হিম শীতল বাতাসের পরশে গা জুড়ানো।
সমতল লাল পাহাড়ের উপর এ যেন কোন শিল্পীর রঙ্গীন তুলিতে আঁকা ছবির সারি। পাহাড়ের উপর পাহাড়, সমতল ভূমির উপর কৃত্রিম পাহাড়, তাল-সুপারি ও পামের বৃক্ষরাজি, পাহাড়ের টিলা, ঝর্ণাধারা, স্বচ্ছজলের কৃত্রিম লেকে বক আর রাজহাঁস পালের জলকেলীতে মাতামাতি।
ন্যাচারাল বাঁশ বাগান, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের গরুর গাড়ি, মিনি চিড়িয়াখানায় শিয়াল, মেছো বাঘ ও হনুমানসহ বিচিত্র পশুপাখি এবং প্রাণীর জীবন্ত সংগ্রহশালা।
শিশুদের জন্য রয়েছে ড্রাগন, ড্রাইনোসর, বাঘ, ঘোড়া, হাতি ও সিংহের মূর্তি। শিশু-কিশোরদের বিনোদনে রয়েছে দুরন্ত গতির ইলেক্টনিক ট্রেন, ওয়ান্ডার হুইল, কিডি রাইডস, ভয়েজার বোট, রকেট।
এছাড়াও ওয়াটার পার্ক, সুইমিংপুল, থ্রিডি মিনি সিনেমা হল, ৫’শ আসনের অডিটরিয়াম, স্যুটিং স্পট, রিসোর্টে বসেই বড়শি দিয়ে মাছ শিকারসহ নানা সুবিধা রয়েছে।
প্রবেশ মূল্য: প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এই পার্কে। প্রবেশ মূল্য ১০০টাকা। এছাড়া ভিতরের প্রতিটি রাইডের জন্য আলাদা করে ৩০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দিতে হয়। ৫ বছরের নীচের বাচ্চাদের জন্য ৭টি রাইডার্স ফ্রি।
কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহে আসতে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামীম এন্টারপ্রাইজ, সৌখিনসহ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। সময় লাগবে আড়াই থেকে চার ঘন্টা । এছাড়াও কমলাপুর বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-নেত্রকোণা রুটের গাড়িতেও ময়মনসিংহে যেতে পারবেন। এনা ট্রান্সর্পোটে ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। তাছাড়া সৌখনি পরিবহন-১৫০ টাকা। তবে আলম এশিয়ায় গেলে সরাসরি ফুলবাড়ীয়া উপজেলা সদরে নামতে পারবেন। মাসাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে অথবা শহরের ব্রীজ মোড়ে নেমে বাস বা সিএনজি করে যাওয়া যাবে আলাদিন্স পার্কে।
এছাড়া ঢাকা থেকে বাসে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা মোড়ে নামতে পারেন। সেখান থেকে মাত্র ২০ মিনিটের পৌছাতে পারবেন আলাদিন্স পার্ক।
অথবা ঢাকা থেকে ট্রেন করেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল সাতটা বিশ), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর দুইটা বিশ), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকাল চারটা চল্লিশ), অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস (সন্ধ্যা ছয়টা), হাওড় এক্সপ্রেস (রাত এগারোটা পনেরো) এ ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ভাড়া শ্রেণীভেদে ১০০ থেকে ৩৬০ টাকা। রেল স্টেশন থেকে বাস বা সিএনজি করে যেতে পারবেন আলাদিন্স পার্ক।
কোথায় থাকবেন: পার্কেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন কর্টেজ ভাড়া হচ্ছে, এসি ডিলাক্স ৪ হাজার টাকা, এসি ৩ হাজার টাকা ও নন এসি ২ হাজার টাকা। পিকনিক প্যাকেজ হচ্ছে প্রবেশসহ সকল রাইডর্স এবং দুপুরের খাবার কর্পোরেট বা ফ্যামিলি জনপ্রতি ৫’শ টাকা। কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য জনপ্রতি ৪’শ টাকা। আর ১০ বছরের নীচে শিশুদের জন্য জন প্রতি ৩৫০টাকা।
এছাড়া ময়মনসিংহ শহরেও থাকতে পারেন। এজন্য রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- আমির ইন্টান্যাশনাল (০১৭১১১৬৭ ৯৪৮), হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশলনাল (০১৭১৫১৩৩ ৫০৭), হোটেল হেরা (০১৭১১১৬৭ ৮৮০), হোটেল সিলভার ক্যাসল (০৯১৬৬১৫০, ০১৭১০৮৫৭ ০৫৪), হোটেল খাঁন ইন্টারন্যাশনাল (০৯১৬৫৯৯৫) প্রভৃতি।
খাওয়া-দাওয়া: ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থল প্রেস ক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এছাড়া হোটেল সারিন্দা ও হোটেল ধানসিঁড়িও ভালো । এছাড়া শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে মাঝারি ও নিম্নমানের বেশ কিছু খাবার হোটেল। তবে ফুলবাড়ীয়া সদরে খাবার জন্য কিছু হোটেল পাবেন।