দুর্গাপূজা মানেই আলোর মেলা, ঢাকের তালে উন্মাদনা, চারদিক আনন্দে মাতোয়ারা। কিন্তু এ বছর যেন সেই রং, সেই উচ্ছ্বাস মুছে গেছে আসামের আকাশ থেকে। কারণ, আসামের আবেগ, প্রাণের শিল্পী জুবিন গার্গ নেই। এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ৫২ বছর বয়সী এই সংগীতশিল্পীর প্রাণ।
তারপর থেকেই শহরটিতে উৎসবের ঋতুতে ভেসে বেড়াচ্ছে শোকের ছায়া। দুর্গাপূজা প্রায় বন্ধ, স্থানীয়রা উৎসব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
জুবিনের শেষযাত্রা যেন হয়ে উঠেছিল এক মহাযাত্রা। প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের মতো দেখতে অর্জুন ভোগেশ্বর বড়ুয়া স্পোর্টস কমপ্লেক্স থেকে কামরূপের কামারকুচি শ্মশান পর্যন্ত হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছিল।
কেউ গামছা হাতে চোখের পানি মুছেছেন, কেউ আবার বাইক র্যালিতে শোকযাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। ফুলে সাজানো অ্যাম্বুল্যান্স চলতেই চারদিক মুখর হয়ে উঠেছিল গান আর স্লোগানে—‘মায়াবিনী রাতির বুকুত’, ‘জয় জুবিনদা’, ‘জুবিনদা জিন্দাবাদ’। গান থেমে গেলেও মানুষের কণ্ঠে বেজে উঠেছিল তার সুর। আসাম কেঁদে বিদায় জানায় তার প্রিয়তম সন্তানকে।
সব দিকে আলোর মেলার ছড়াছড়ি হলেও আসাম জুড়ে এবার দুর্গাপূজায় নেই সেই আলো। কাহিলি পাড়ার পূজার দায়িত্ব ছিল জুবিনের কাঁধে। সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়া এই মানুষটিই ছিলেন পাড়ার প্রাণ। তাই তার প্রয়াণে সেই পূজাই বন্ধ হয়ে গেছে।
গৌহাটির বাসিন্দা সঞ্চারী রায়চৌধুরীর কথায়, ‘১৯ সেপ্টেম্বর থেকে কারোর মন ভালো নেই।
জুবিন আসামের কাছে ভগবান। দুর্গাপূজা প্রায় বন্ধ। স্থানীয়রা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন উৎসব থেকে, কেবল বাঙালি কমিউনিটি কিছু পূজা উদযাপন করছে।’
সঞ্চারী আরো বলেন, ‘আমি আসামের মানুষ নই, গত চার বছর ধরে এখানে থাকছি। আমি এখনো পূজায় কলকাতায় যাই। কিন্তু এবার সত্যিই মন ভালো নেই। এই উৎসব না হওয়া নিয়ে মন খারাপ নেই।’
ড. ভূপেন হাজারিকার পর আসামকে নতুন সাংস্কৃতিক পরিচয় দিয়েছিলেন যে মানুষটি, তিনি আজ আর নেই। কিন্তু তার সুর আজও বেঁচে আছে মানুষের অন্তরে। হয়তো তিনি আর কোনোদিন মঞ্চে উঠবেন না, কিন্তু যখনই বাজবে “মায়াবিনী রাতির বুকুত”, আসামবাসী অনুভব করবে—জুবিন আছেন, আছেন তাদের প্রাণের ভেতর, আকাশভরা সুর হয়ে।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে মেঘালয়ের তুরায় জন্ম নেওয়া জুবিন গার্গ চার দশকের ক্যারিয়ারে গেয়েছেন ৯ হাজারেরও বেশি গান, এমনকি ৪০টিরও বেশি ভাষায়। বলিউডের ‘ইয়া আলি’ গানটি তাকে দিয়েছে জাতীয় পরিচিতি। অসমিয়া ও বাংলা ছবিতে গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, প্রযোজক—সব কিছুতেই তিনি রেখেছেন সাফল্যের ছাপ। বিতর্ক তাকে ছুঁলেও ভক্তদের কাছে তিনি আবেগ, প্রতীক, এক যুগের সুর। সমাজসেবায়ও রেখেছেন স্মরণীয় দাগ। পশু বলি বন্ধের আন্দোলনে পেয়েছিলেন পিটার-র ‘হিরো’ উপাধি।
সূত্র : দ্য ওয়াল
এসএন