প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ ভয়, আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে: রনি

সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত আমাদের সামনে এমন একটি ছবি তুলে ধরছে, যেখানে স্বাভাবিকতা হারিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ ভয়, আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। রাজনীতি, প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ, সব ক্ষেত্রেই এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা নাগরিকদের মনে হতাশা এবং নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি জাগাচ্ছে। এই অনিশ্চয়তার দেশে আমরা যেন এক প্রকার অস্থিরতার মধ্যে দিনযাপন করছি।


শনিবার (৪ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব কথা বলেন।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন কোনো কিছুই স্বাভাবিকভাবে ঘটছে না। যেখান থেকে যে ধরনের ঘটনা ঘটার কথা, যার মুখ থেকে যে ধরনের কথা শোনার কথা, কিংবা যে প্রতিষ্ঠান থেকে যে ধরনের তৎপরতা দেখানোর কথা—তার একটিও দেখা যাচ্ছে না। ফলে চারদিকে হতাশা, অনিশ্চয়তা, ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘যখন আপনি সব কিছু স্বাভাবিক অবস্থায় পাবেন তখন আপনার চোখে একটি স্বপ্ন থাকবে। জীবনের সব বিষয়ে নিশ্চয়তা না পেলেও কিছু ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন, আজকের দিনটা এভাবেই কাটবে। কিন্তু বর্তমান রাজনীতির অঙ্গনে যা কিছু ঘটছে—তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ ভয়, আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা খুঁজে পাচ্ছে।’

ধরুন, বিএনপির মহাসচিব হবেন কে সালাহউদ্দিন সাহেব নাকি, বর্তমান মহাসচিবই থেকে যাবেন? তারেক রহমান আসবেন কি আসবেন না, আসলেও কবে আসবেন, কয় সপ্তাহের মধ্যে নাকি আরো পরে? তিনি কোথায় থাকবেন, তার জন্য কি ইতিমধ্যে বাড়িভাড়া খোঁজা হচ্ছে, আর সেই বাড়িগুলো কি পাওয়া গেছে? বিএনপি কি একা নির্বাচন করবে, নাকি সঙ্গী-সাথী নিয়ে অংশ নেবে? যদি সঙ্গী নেয়, তবে কিভাবে তাদের জন্য আসন ছাড়বে, ৫০টি, ১০০টি, নাকি ২০-৩০টি? নির্বাচন কি পিআর পদ্ধতিতে হবে, নাকি প্রচলিত নিয়মে? আগে গণভোট হবে, নাকি সরাসরি নির্বাচন, বা দুটো একসঙ্গে? জাতীয় নির্বাচনের আগে কি উপজেলা বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে? আর নির্বাচন কি ফেব্রুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হবে? প্রতিদিন এমন অসংখ্য প্রশ্ন বড় মানুষরা ছোট মানুষদের কাছে করছে।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সঙ্গী-সাথীদের মধ্যেও নানা ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। ইউনূস সাহেব খুব হিসাব করে কথা বলেন, কিন্তু তার প্রেসসচিব যা বলেন তা শুনলে মনে হয় এক কথার সঙ্গে আরেক কথার কোনো ধারাবাহিকতা নেই। অন্যদিকে সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্তা হঠাৎ করে নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। এখন কার্যত সরকারের কোনো মুখপাত্র নেই বললেই চলে। মাস্টারমাইন্ড হিসেবে যাকে ড. ইউনূস পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সেই মাহফুজ সাহেবও নানা রকম হতাশা প্রকাশ করেছেন।

রনি বলেন, ‘আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার একটি সাক্ষাৎকার দেখলাম। সেখানে তিনি বলার চেষ্টা করছিলেন যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাককে নিয়োগ দেওয়ার জন্য যে চাপ ছিল, তা তিনি ঠেকিয়েছেন বা রাজি হননি। এখন পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, তিনি সঠিক ছিলেন। অন্যদিকে হাসনাত, সারজিস, আক্তার নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কথাবার্তার মধ্যে আগের স্পিরিট আর নেই। তারা এখন আগের মতো ঝুঁকি নিচ্ছেন না, অনেকটাই সংকোচে আছেন। দেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথাও এখন বলছেন না।’

জামায়াত প্রসঙ্গে গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘জামায়াত খুবই রহস্যজনক আচরণ করছে। তারা একদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, আবার যাচ্ছেন না। কখনো পিআরের কথা বলছেন, আবার প্রার্থী নির্বাচনও করে রেখেছেন, ইত্যাদি নানা কথা তারা বলছে।’

তিনি বলেন, ‘নিম্ন আদালতে কী হচ্ছে তা আপনাদের ভালোই জানা আছে। আর উচ্চ আদালতের বিচারকদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা আমি ১৯৮০-এর দশক থেকে আজ পর্যন্ত সাধারণ নাগরিক হিসেবে যতটা দেখেছি, সেটি সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। গত এক বছরে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন অনেক, আবার অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। গণহারে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে এবং সবাইকে হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে আমি এর সমর্থন করি না। একজন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি রায় পরিবর্তন করেছেন শেখ হাসিনার কথামতো, সুপ্রিম কোর্টের মান-মর্যাদা নষ্ট করেছেন। এটি হলে তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু যদি তিনি হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন, তাহলে সেই দিকও বিচার করা দরকার। এ রায় লিখতে হবে, এ দৃশ্য দেখতে হবে। একজন বিচারকের ন্যূনতম আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে এর কষ্ট ও বেদনা বোঝা সম্ভব।’

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পাকিস্তানের ইতিহাস ও ভূগোল বদলে দেওয়ার হুঁশিয়ারি রাজনাথের Oct 05, 2025
img
৫ দফা দাবি পূরণ করেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে হবে : ড. হেলাল Oct 04, 2025
img
সুরাকে নিয়ে হাসপাতালে আরবাজ Oct 04, 2025
img
বাংলাদেশের পূজা দেখে হিন্দুস্তানের শিক্ষা নেওয়া উচিত: রাশেদ প্রধান Oct 04, 2025
img
শহিদুল আলম সহ অংশগ্রহণকারী সকলের অবস্থা সরকার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে : প্রধান উপদেষ্টা Oct 04, 2025
img
পাহাড়ে রোববার থেকে শুরু হচ্ছে প্রবারণা উৎসব Oct 04, 2025
বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে আহত ২০: জামায়াত আমিরের অব্যাহতি Oct 04, 2025
img
ফ্লোটিলার নেতৃত্ব দেওয়া থুনবার্গকে তৃষ্ণার্ত-ক্ষুধার্ত রাখছে নেতানিয়াহু’র দেশ Oct 04, 2025
img
যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রসঙ্গে নতুন সতর্কবার্তা ট্রাম্পের Oct 04, 2025
img
সাংবাদিকদের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির দাবি Oct 04, 2025
img
বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব যথেষ্ট পরিমাণ বদলে গেছে : মোস্তফা ফিরোজ Oct 04, 2025
img
ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার Oct 04, 2025
img
বাংলাদেশিদের ভিসা সহজ করতে অনুরোধ আমিরাত সরকারকে Oct 04, 2025
img
জনগণের খাদেম হয়ে বাঁচতে চাই : এটিএম আজহার Oct 04, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা Oct 04, 2025
img
ব্যাংকিং খাতে দক্ষ এমডির চরম সংকট : গভর্নর Oct 04, 2025
img
বিসিবি নির্বাচন না পেছালে ঢাকার ক্লাবগুলোর একাংশের ক্রিকেট বর্জনের হুমকি Oct 04, 2025
img
দেশের বাজারে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরি ছাড়াল ১ লাখ ৯৭ হাজার Oct 04, 2025
আমাকে গ্রেফতার করার জন্য সেনাবাহিনীকে উস্কে দেয় Oct 04, 2025
img
অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ছাত্রদল নেতার বাড়ি থেকে আটক ৫ Oct 04, 2025