দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
তিনি বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা, অর্থনীতির সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এমন জায়গায় প্রতিদিন সিরিজ আকারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। আমি মনে করি ফ্যাসিস্টদের তোষামদকারী দোসরদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে পারে নাই। তাই তারা অডিও-ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে নির্দেশনা পেয়ে এই কাজ করছে। এখানে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত হওয়া উচিত।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর তিলোত্তমা হোটেলে এনসিপির জেলা ও উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সমন্বয় সভায় শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সুশীল ও দয়াপ্রবণ মনোভাব থেকে বের হয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের সুশীল ও দয়াপ্রবণ মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। গতকাল বিমানবন্দরে ঘটনা হাজার হাজার পরিবারকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। একজনের প্রতি সুশীলতা প্রকাশ করতে গিয়ে হাজার পরিবারের সাথে অন্যায় করতে পারি না। সরকারকে একটু শক্ত ও দৃঢ়ভাবে ব্যবস্থা নিতে দেখতে চাই। তাহলে নির্বাচনকালীন তাদের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের আস্থা তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ের শহীদ পরিবারগুলোর দুর্দশা অবস্থা। সেই জায়গায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সম্মানি দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেটি এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন দেখতে পারছি না। সরকার নির্বাচন দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু আপনাদের জায়গা থেকে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত না করে, খুনি হাসিনাসহ গণহত্যার বিচার, মোদির বিরুদ্ধে আন্দোলন, শাপলা চত্বর আন্দোলন, বিডিআর বিদ্রোহের বিচার না করে, শহীদ পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সরকার যদি দায়সারা নির্বাচন দিতে যায়, তাহলে সরকারকে সবার আগে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের মুখোমুখি হতে হবে।
সারজিস আলম বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে লাগেনি শেখ হাসিনাকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে। ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। সরকারকে অনুরোধ করবো আপনাদের জায়গা থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ডিল করে পাশাপাশি নির্বাচনের আলোচনা করুন। সব কিছু ভুলে গিয়ে শুধু নির্বাচনের কথা বললে দেশের মানুষের কাছে আপনাদের আস্থা ও ইমেজের চরম সংকট তৈরি হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, দেশের মানুষ যে যে দলই করুক, তারা জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বাস্তবায়ন চায়। যারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে সেই সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এখন বলছে এই দায়সারা স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে কি না। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, বিএনপি তাদের জায়গা থেকে ৬-৭টি জায়গায় নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, বিএনপির সাথে কোনো বিরোধিতা নাই।
আমাদের জিজ্ঞাসা ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে, গণভোটে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে নোট অব ডিসেন্টগুলো যারা ক্ষমতায় আসবে সব কিছু ভুলে গিয়ে জুলাই সনদের প্রত্যেক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে তারা বাধ্য থাকবে কিনা। দেশের মানুষের যে বিষয়ে অস্পষ্ট সেটির ক্লিয়ারেন্স চায়, আমরাও সেটিই চেয়েছি। সরকার যদি এগুলো পাশ কাটিয়ে যায়, তাহলে আমরা বিশ্বাস করি জনগণ এর বিপক্ষে অবস্থান নেবে, আর এনসিপি জনগণের পক্ষে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাশ কাটিয়ে গেলে সেগুলোও এক্সিটের অংশ। দেশের মানুষের সাথে, অভ্যুত্থানের আকাঙ্খার সাথে তা কোনোভাবে প্রাসঙ্গিক হবে না।
শাপলা প্রতীক নিয়ে সারজিস আলম বলেন, এনসিপি শাপলা প্রতীকের বিষয়ে অনঢ়। কোনো আইনগত বাধা না থাকা স্বত্ত্বেও যদি ইসি তাদের স্বৈরাচারী আচরণ প্রদর্শন করে, স্বেচ্ছাচারিতা করে, কোনো প্রভাবে প্রভাবিত হয়, এনসিপি এই যৌক্তিক চাওয়াকে যদি মূল্যায়ন না করে, তাহলে আমরা রাজনৈতিকভাবে রাজপথে এটির মোকাবেলা করবো। এনসিপির প্রতিনিধি দল আজ নির্বাচন কমিশনের সাথে কথা বলেছে। লিখিতভাবে কথাগুলো জানিয়ে এসেছে। আইনজীবীরা বলেছেন, শাপলা প্রতীক দিতে আইনগত বাধা নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।
সাংগঠনিক বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি করতে চাই। আগামী নভেম্বর মাসে কিংবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ওয়ার্ড পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে পারবো। এতে করে পার্টি শক্তিশালী হবে।
এ সময় এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল্লাহ গালিব, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী সাদিয়া ফারজানা দিনা, এনসিপি নেতা আলমগীর নয়ন, আলমগীর হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আইকে/টিএ