বিশ্বে মূল্যায়ন হয় কাজে, নোবেল নয় : মাসুদ কামাল

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেছেন, নোবেল জয়ী হওয়া কোনো ব্যক্তিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেয় না। আন্তর্জাতিক মহলে সম্মান এবং স্বীকৃতি আসে তার কার্যক্রম ও নেতৃত্বের কাজের ভিত্তিতে। একজন নোবেল বিজয়ী রাষ্ট্রপ্রধান হলেও বিশ্বের নজর এবং মূল্যায়ন থাকে তার সরকারের কর্মকাণ্ড এবং অর্জিত ফলাফলের ওপর। ব্যক্তিগত খ্যাতি বা পরিচিতি এখানে কম গুরুত্বপূর্ণ।

বুধবার (২২ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেন।

মাসুদ কামাল বলেন, ড. ইউনূস যেভাবে দেশ চালাচ্ছেন অর্থাৎ যেভাবে দেশটাকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেওয়ার দাবি করছেন, সেটা সারা দুনিয়ার গণতান্ত্রিক দেশগুলো কতটুকু মানছে, সেটাই মূল প্রশ্ন। গতকাল আমি ছয়টি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত সংগঠনের নাম বলেছিলাম, যাদের সঙ্গে উনার সম্পর্ক খুব ভালো। উনি যখন আমেরিকায় গিয়েছিলেন, তখন তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বৈঠকের পর তারা একটি চিঠি লিখে ড. ইউনূসকে বলেছেন যে, তারা দেখতে চায় উনি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘ড. ইউনূসের পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক খুব শক্তিশালী, সেটি বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম, উনি যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন তাহলে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক উনার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী হবেন, উনার সঙ্গে কথা বলবেন, উনার ভাবনাকে গুরুত্ব দেবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেটি আমরা দেখতে পাইনি।

মাসুদ কামাল বলেন, যখন একজন নোবেল বিজয়ী সরকার প্রধান হন তখন আন্তর্জাতিক মহলে তাকে আর নোবেল বিজয়ী হিসেবে দেখা হয় না। তাকে দেখা হয় সরকারের প্রধান হিসেবে, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে। তখন তারা বিচার করে, এই সরকারের প্রধান হিসেবে তিনি কি কি কাজ করেছেন, কি কাজ করতে চাচ্ছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্ক আর ততটা কাজে আসে না।

আমরা সেই দৃশ্যের বাস্তবতা নির্মমভাবে দেখেছি।

এবং সেই দৃশ্যের দ্বিতীয় ধাপ আমরা আজও দেখছি।

আইএমএফ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া তারা ঋণ দিতে পারে না। আমাদের জন্য নির্ধারিত ঋণ ছয়টি কিস্তিতে দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে পাঁচটি কিস্তি দেওয়া হয়েছে। ষষ্ঠ কিস্তি, যা প্রায় ৮০ কোটি ডলারের বেশি, ডিসেম্বরে দেওয়া হওয়ার কথা ছিল। আইএমএফ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা ষষ্ঠ কিস্তি এখনই ছাড়বে না। কারণ তারা চায়, ঋণের টাকা কেবল নির্বাচিত সরকারের হাতে যাবে।

আইএমএফ বলেছে, নতুন সরকার আসার পর তারা দেখবে যে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তা কতটা কার্যকর হয়েছে। তারা মনে করে না—এই সংস্কার কার্যক্রম হুবহু বাস্তবায়িত হবে। তারা চাইবে, নতুন সরকার সেই কার্যক্রমের মূল্যায়ন করবে এবং সেই মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থাৎ, বর্তমান সরকারের ওপর তারা নির্ভর করতে পারছে না এবং ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, ঋণ দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ আগের তুলনায় বেড়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটি একটি ইতিবাচক দিক। অর্থমন্ত্রী ভালো কাজ করছেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে কিছু দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে গভর্নর যথাযথ উদ্যোগ নেননি। ফলে কিছু জায়গায় ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে। মূল বিষয় হচ্ছে আইএমএফের ঋণের টাকা এখন দেওয়া হচ্ছে না। টাকার পরিমাণ ইম্পর্টেন্ট নয়; গুরুত্বপূর্ণ হলো, আন্তর্জাতিকভাবে এই সরকারের ইমেজ। ড. ইউনূস দেশটাকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে একটি সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে তুলে ধরতে পারেননি। আন্তর্জাতিকভাবে উনার পরিচিতি এবং নোবেল বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও, এটি আমাদের জন্য কোনো বড় সুবিধা আনতে পারেনি। এটাই উনার ব্যর্থতা।

আইকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাকসুর নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ, শপথ ২৬ অক্টোবর Oct 23, 2025
img

প্রধান উপদেষ্টা

শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ বিকাশে শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া চর্চা অপরিহার্য Oct 23, 2025
শেখ হাসিনার মামলার রায়ের দিন ধার্য হতে পারে বৃহস্পতিবার টাইমস ফ্ল্যাশ Oct 23, 2025
img
মুশফিকুল ফজল আনসারীকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস সংগীতশিল্পী ন্যান্সির Oct 23, 2025
img
‘লাইফে টেনশন নেওয়ার কিছু নেই’- জীবনের মন্ত্র জানালেন জ্যাকি শ্রফ Oct 23, 2025
img

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

ফ্রাঙ্কফুর্টকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করল লিভারপুল Oct 23, 2025
img

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

বেলিংহ্যামের দুর্দান্ত গোলে জুভেন্টাসকে উড়িয়ে দিল রিয়াল মাদ্রিদ Oct 23, 2025
img
নগর বাউলের তৃতীয় স্ত্রী কে এই মার্কিন তরুণী? Oct 23, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ২ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৩০ Oct 23, 2025
img
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন ১২ নির্দেশনা জারি Oct 23, 2025
img
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের তালিকায় সিলেট! Oct 23, 2025
img

মানবতাবিরোধী অপরাধ

শেখ হাসিনা ও কামালসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ধার্য হতে পারে আজ Oct 23, 2025
img
ফ্রি ফায়ার ওয়ার্ল্ড সিরিজ খেলতে জাকার্তায় যাচ্ছে বাংলাদেশ দল! Oct 23, 2025
img
ফেসবুক লাইভে এসে আ.লীগে যোগ দেওয়ার কথা জানালেন বিএনপি নেতা ফজলুর করিম Oct 23, 2025
img
বাড়ল ডলারের দাম ! Oct 23, 2025
img
গরু চুরির মামলায় কারাগারে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা Oct 23, 2025
img
অক্টোবরের ২১ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এলো ১৮৫ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার Oct 23, 2025
img
অবশেষে কমলো রুপার দাম! Oct 23, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাজনৈতিক বাগবিতণ্ডার জেরে ২ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ Oct 23, 2025
img
গাজীপুরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ৩ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সচল Oct 23, 2025