হজম ক্ষমতা বাড়াতে করণীয়

খাদ্য সঠিকভাবে হজম না হলে দেহে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- ডায়রিয়া, গ্যাস, বদ হজম, হৃদযন্ত্রে জ্বালাপোড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

তাই হজম ক্ষমতা বাড়াতে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে ও দৈনন্দিন জীবনে পরিকল্পিত পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। হজম ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু কার্যকর কৌশল নিচে দেয়া হলো-

১. পুষ্টিকর খাবার
অতিরিক্ত মাত্রায় তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার খেলে বদহজম দেখা দিতে পারে। তাই তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। তাছাড়া যথাসম্ভব প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খেতে হবে।

২. আঁশযুক্ত খাবার
প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খান। দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবারে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ থাকে যা হজম ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। আঁশজাতীয় খাদ্যের কিছু সাধারণ উৎস হলো আটা, যব, বাদাম, মটরশুটি, ডাল, ছোলা, ফল-মূল, শাক-সবজি ইত্যাদি।

৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে হজম সংক্রান্ত জটিলতা দূর হবে। এক্ষেত্রে কার্বনেটেড পানি (স্পার্কলিং ওয়াটার) পান করা ভালো। তবে সতর্ক থাকতে হবে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানি তথা কোমল পানীয় পান করা যাবে না।

৪. চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ হজম সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি করে। কারণ চাপের ফলে ব্যক্তি বিশ্রামের সময় পায় না এবং এতে খাদ্য পরিপাকে সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া চাপের সময় রক্ত ও শক্তি পরিপাকতন্ত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই হজম ক্ষমতা বাড়াতে মেডিটেশন ও বিশ্রামের মাধ্যমে চাপ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

৫. ধীর গতিতে খাবার খান
খাওয়ার সময় গভীর মনোযোগ দিয়ে খাবেন। কারণ দ্রুত খেলে বেশি খাবার প্রবণতা তৈরি হবে। তাই বেশি সময় নিয়ে ধীরে ধীরে কম খাবার খাবেন। খাওয়ার সময় বার বার খাদ্যের স্বাদ এবং ঘ্রাণ নিন। এটা হজম ক্ষমতা বাড়াবে।

৬. বেশি করে চিবানো
খাদ্য মূলত আমাদের মুখে থাকতেই পরিপাক শুরু হয়ে যায়। খাদ্যকে বেশি করে চিবালে তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। এতে পরিপাক ক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত হরমোনগুলো সহজেই খাদ্যকণাকে ভেঙে ফেলতে পারবে। এটা আমাদের হজম শক্তি বাড়াবে।

৭. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে বদ হজম জটিলতার উপসর্গ হ্রাস করে। এজন্য নিয়মিত হাঁটা খুব উপকারী। তবে সাইক্লিং বা জগিং করলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।

৮. পাকস্থলির এসিড নিয়ন্ত্রণ
পাকস্থলিতে যথেষ্ট পরিমাণে এসিড না থাকলে তা খাদ্য পরিপাকে জটিলতা তৈরি করে। এতে বদহজম, বমি বমি ভাব, জ্বালাপোড়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে পাকস্থলিতে এসিড বাড়াতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার একটি ভালো সমাধান। ১-২ চা চামচ ভিনেগার ছোট গ্লাসে পানিতে মিশিয়ে পান করুন। বিকল্প হিসেবে খাবার পর অ্যাপল সিডার ভিনেগার সমৃদ্ধ চুইংগাম চিবাতে পারেন।

৯. বদ অভ্যাসগুলো বদলে ফেলুন
আমাদের অনেকের ধুমপান, মদ্যপান, অনেক রাত্রী করে খাবার খাওয়াসহ বিভিন্ন বদ অভ্যাস রয়েছে। এগুলো পরিবর্তন করতে হবে। কারণ এগুলো আমাদের হজম ক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

১০. প্রোবায়োটিক খাদ্য
হজম সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে প্রোবায়োটিক খাদ্য একটি উত্তম সমাধান। প্রোবায়োটিক খাদ্য বা এর সম্পূরক অন্ত্রে ল্যাকটিক এসিড ও শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে হজম সংক্রান্ত জটিলতা নিরাময় করতে পারে।

১১. গ্লুটামাইন ও জিংক সমৃদ্ধ খাদ্য
গ্লুটামাইন একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা অন্ত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সয়াবিন, ডিম ও বাদাম ইত্যাদি খাবার খেয়ে গ্লুটামাইন বাড়াতে পারেন। এছাড়া জিংক এক প্রকার খনিজ যা অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। তাই হজম ক্ষমতা উন্নত করতে বেশি করে জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

 

Share this news on: