অভিনয়জীবনের শুরুর দিকের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মালায়ালাম ভাষার গুণী অভিনেত্রী সুমা জয়রাম। ১৯৯০-এর দশকে চলচ্চিত্র শিল্পে নারীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাজ করতেন বলেও এসময় তিনি মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি মাইলস্টোন মেকারস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুমা জানিয়েছেন, কিশোর বয়সে সিনেমায় কাজ শুরু করার সময় কীভাবে হয়রানি ও অবিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং কীভাবে সেই অভিজ্ঞতাগুলো তার ক্যারিয়ার ও মানসিকতায় গভীর দাগ রেখে গেছে।
সুমা জানান, কুট্টেট্টান, মাঝায়েথুম মুন্পে, হিজ হাইনেস আব্দুল্লাহ, এন্তে সূর্যপুত্রিক্কু, একলব্যন ও ইস্টাম–এর মতো জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করলেও তার কাজের স্বীকৃতি তিনি পাননি। “যখন কোনো দৃশ্য বড় হতো, তখন তা কেটে দেওয়া হতো। শেষমেশ আমি যা অভিনয় করতাম, তা কমে গিয়ে দুইটা দৃশ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। এভাবেই আমি ছোট চরিত্রেই আটকে যেতাম”- বলেন তিনি।
অভিনেত্রী আরও জানান, তিনি একসময় সিবি মালয়িলের ভারথম (১৯৯১) ছবিতে মোহনলাল ও নেডুমুদি ভেনুর বোনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই তাকে বাদ দেওয়া হয়।
তার ভাষায়,“আমি সেখানে চার দিন ছিলাম। পরিচালক পদ্মরাজন মারা যাওয়ার পর আমাকে জানানো হয়, বাড়ি ফিরে যেতে হবে। এক সপ্তাহ পর ‘নানা’ ম্যাগাজিনে দেখি, সেই চরিত্রে সুচিত্রা মুরালি অভিনয় করছেন।”
একই ঘটনা ঘটে ফাসিলের এন্তে সূর্যপুত্রিক্কু ছবির শুটিংয়েও। সুমা বলেন, “আমি সেখানে আমলার বোনের চরিত্রে যাচ্ছিলাম, কিন্তু শুটিং লোকেশনে গিয়ে দেখি অন্য কাউকে নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমাকে বন্ধুর চরিত্রে বদলে দেওয়া হয়। সেই বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন তামিলনাড়ু থেকে আসা এক মেয়ে।”
সেই সময়ের কাজের পরিবেশ নিয়ে সুমা বলেন, “তখন কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললে তার চড়া মূল্য দিতে হতো। এখন #মিটু আন্দোলনের মতো উদ্যোগ আছে, কিন্তু তখন এমন কিছু ছিল না। তখন অনেক কিছু ত্যাগ করতে হতো। আপনি যদি ‘কমপ্রোমাইজ’ না করতেন, সুযোগ হারাতেন। কেউ কথা বলত না, কারণ সবার পরিবার ছিল। আজও যারা সাহস করে কথা বলে, তারা অনেক সময় কাজ হারায়।”
সবশেষে তিনি শেয়ার করেন তার কিশোর বয়সের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। সুমা জয়রাম বলেন,“আমি তখন ১৬ বা ১৭ বছরের হবো। এক বিখ্যাত পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করতে গিয়েছিলাম। মা আমার সঙ্গে ছিলেন। শুটিংয়ের একদিন রাত ১০টার দিকে হঠাৎ দেখি সেই পরিচালক আমার ঘরের বারান্দার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, তিনি সম্পূর্ণ মাতাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ভয় পেয়ে যাই।
কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কির পর তিনি চলে যান। পরদিন শুটিং সেটে গিয়ে দেখি, তিনি রেগে গিয়ে গালাগাল দিচ্ছেন। এমন অভিজ্ঞতাই অনেককে চুপ করে দেয়।”
ভয়, নীরবতা আর শোষণের সেই সময়ের কথা মনে করলে এখনো শিউরে উঠেন বলেও জানান সুমা জয়রাজ।
আইকে/টিএ