ভোটের হিসাব।
নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার একটি হচ্ছে- আওয়ামী লীগের সমর্থকরা কাকে ভোট দেবে? প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। ভোট কারচুপি, লুটপাট, গুম-খুন ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা অপরাধ করলেও এই দলটির যে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে, সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
বাংলাদেশের প্রথম দুটো রাজনৈতিক দলের একটি আওয়ামী লীগ। ভোটের হিসেবে দলটি কখনও প্রথম, কখনও দ্বিতীয়। জুলাই হত্যাকাণ্ডের পর তাদের প্রতি মানুষের সমর্থন নিঃসন্দেহ কমেছে, কিন্তু তারপরেও এই সংখ্যা উপেক্ষা করার মতো নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে – এতো ভোট কোথায় যাবে? দলের প্রধান শেখ হাসিনা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক তিনটি মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অংশ নিতে না পারলে তার দল নির্বাচন বয়কট করবে। ফেসবুকে ‘নো বোট নো ভোট’ এরকম একটি প্রচারণাও চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের সমর্থক, নেতা ও কর্মীরা।
ধরে নিচ্ছি, অংশ নিতে না পেরে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বয়কট করল। কিন্তু তাদের যে অগণিত সমর্থক তারা কি সেদিন বাড়িতে দিবানিদ্রা যাবে? সেটা ভাবা মনে হয় ঠিক হবে না। তারা ভোটকেন্দ্রে ঠিকই যাবে এবং কোনো না কোনো দলের প্রার্থীকে ভোট দেবে। প্রকাশ্যে বয়কটের কথা বললেও, দলের গোপন রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে তারা নিশ্চয়ই কোন একটি দলকে সমর্থন করবে।
তাহলে সেটা কোন দল? বিএনপি? জামায়াত? নাকি এনসিপি?
এনসিপিকে ভোট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। চোখ বন্ধ করেই সেটা বাদ দেওয়া যায়। রইল দুটো দল- বিএনপি ও জামায়াত। এদের মধ্যে কোন দলটি ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের জন্য সুবিধাজনক হবে?
আমি কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়েছি। সেখানে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের দ্বিতীয় স্তরের নেতারা জামায়াতে ইসলামীর কাছে আশ্রয় নিয়েছে।প্রথম সারির নেতারা তো এলাকা ছেড়েই পালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পতনের আগে জামায়াতের দ্বিতীয় সারির নেতারাও এই আওয়ামী লীগের ভেতরে ঘাপটি মেরে রাজনীতি করছিল। যেমনটা আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে দেখেছি।
তাহলে আওয়ামী লীগ কি জামায়াতকেই বেছে নিবে?
এই সম্ভাবনাই বেশি জোরালো। কারণ আওয়ামী লীগের চিরশত্রু বলতে যে দলটিকে বোঝায় সেটি হচ্ছে বিএনপি। জামায়াত নয়। বিএনপির জন্য একমাত্র আওয়ামী লীগ যেমন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তেমনি আওয়ামী লীগের জন্যেও বিএনপি। দুটো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে তারাই পরস্পরের বাধা। এছাড়াও শেখ হাসিনা মনে করেন, বিএনপির নির্বাসিত নেতা তারেক রহমানের পরিকল্পনাতেই জুলাই আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে।
বিএনপির চাইতে জামায়াতের সঙ্গেই আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া বেশি। জামায়াতকে সাথে নিয়ে তারা একসময় বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছে। আওয়ামী লীগ মনে করতে পারে বিএনপি সরকার গঠন করলে তাদের রাজনীতিতে ফিরে আসা কঠিন হবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা সহজ হতে পারে এবং তাতে সাধারণ জনগণের সমর্থনও পাওয়া যাবে। এর মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে রাজনীতির মাঠে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠতে পারবে।
আওয়ামী লীগ যে ফিরবে সেটা শুধু সময়ের ব্যাপার। প্রশ্ন হচ্ছে- কীভাবে ফিরবে।
এমআর/টিএ