কঠোর হচ্ছে ইউরোপের অভিবাসন নীতি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আশ্রয়নীতি কঠোর করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে জোটভুক্ত সব সদস্য রাষ্ট্র। এরপরই রক্ষণশীল জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছেন, এর ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চলমান সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ খুব দ্রুত তুলে নিতে পারে জার্মানি।

কবে নাগাদ এই সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হবে, তা অবশ্য পরিষ্কার করে বলেননি জার্মান চ্যান্সেলর। বেলজিয়াম রাজধানী ব্রাসেলসে সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তা ও জোটভুক্ত দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেছেন। সেই বেঠকে অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর হতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

>> ইইউর বাইরের কোনও দেশে প্রত্যাবাসন কেন্দ্র তৈরি
>> প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নির্বাসন প্রক্রিয়া দ্রুত ও গতিশীল করা এবং আটকের মেয়াদ বৃদ্ধি
>> নিরাপদ তৃতীয় দেশ এবং নিরাপদ উৎস দেশের তালিকা তৈরি
>> ৪৩ কোটি ইউরোর সংহতি তহবিল গঠন
>> ২১ হাজার অভিবাসী স্থানান্তরে পৃথক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
>> অভিবাসী স্থানান্তর, আর্থিক অনুদান কিংবা বিকল্প ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সংহতি ব্যবস্থাকে কার্যকর
>> অনিয়মিত অভিবাসী আগমনে সাইপ্রাস, গ্রিস, ইতালি ও স্পেনকে সর্বোচ্চ চাপের মধ্যে থাকা দেশ হিসেবে চিহ্নিত

বৈঠকের পরদিনই জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মাইনৎসে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ম্যার্ৎস বলেছেন, এই পরিকল্পনার অর্থ হলো আমরা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকে ইউরোপের বহিঃসীমান্তে স্থানান্তর করতে পারবো।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলে প্রতিবেশী ৯টি দেশের সঙ্গে থাকা সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে জার্মানির ওই সময়ের চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের মেয়াদ।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এসপিডিকে সঙ্গে নিয়ে জোট সরকার গঠন করে রক্ষণশীল দল সিডিইউ-সিএসইউ। গত ৬ মে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেন সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সীমান্তে আরো কড়া নজরদারি এবং সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় তার সরকার।

নানা সমালোচনা, প্রতিবেশী দেশগুলোর আপত্তি, আদালতের রায়; সবকিছুর পরও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে জার্মান সরকার। এর মধ্য দিয়ে সাফল্য এসেছে বলেও দাবি করেছে সরকার। কারণ জার্মানি আশ্রয় আবেদন অন্য বছরগুলোর তুলনায় কমেছে। কমেছে অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা।

এর আগে, জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট বলেছিলেন, ইইউজুড়ে অভিন্ন ইউরোপীয় আশ্রয় ব্যবস্থা (সিইএএস) সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার পর সীমান্ত নিরাপত্তা কবে এবং কখন তুলে নেয়া হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

শেনজেন জোন মূলত অবাধ ও মুক্ত চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। কিন্তু সদস্য রাষ্ট্রগুলো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ বা অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। সেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ খুব বেশি দীর্ঘ হওয়ার সুযোগ নেই।

মঙ্গলবার জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্ৎস বলেন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকে সবসময় সীমিত সময়ের জন্য নেয়া পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচনা করেছেন তারা। তিনি বলেন, যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নে একটি অভিন্ন আশ্রয়নীতি চালু হয়, তাহলে সেটাই হবে, যা আমরা সব সময় চেয়েছি।

ব্রাসেলসে নেয়া নতুন পদক্ষেপগুলো কার্যকর করতে হলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। খুব সহসা সেই অনুমোদন পাওয়া যাবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘ অপেক্ষা আর বাগবিতণ্ডার পর অবশেষে ২০২৪ সালে প্রণীত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন এই অভিন্ন আশ্রয়নীতি। এটি আগামী বছরের জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ইনফোমাইগ্রেন্টস।

এমআর 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নারায়ণগঞ্জে দুর্বৃত্তদের হামলায় এনসিপির ৩ কর্মী আহত Dec 11, 2025
img
পোশাক থেকে কুটিরশিল্প, দেশ ৬০% উৎপাদন সক্ষমতা ফিরে পেয়েছে : এম সাখাওয়াত হোসেন Dec 11, 2025
img
জাতীয় পোস্টাল ব্যালট অ্যাপে প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়ালো ৩ লাখ Dec 11, 2025
img
আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সদর দপ্তরে পুলিশের অভিযান! Dec 11, 2025
img
বেগম রোকেয়া নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য সরিয়ে নিলেন রাবি শিক্ষক, কারণও ব্যাখ্যা করলেন Dec 11, 2025
img
এ মাসেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: ইশরাক হোসেন Dec 11, 2025
img
অস্ট্রেলিয়াকে ওয়ার্ক-হলিডে ভিসা পুনরায় চালু করতে আহ্বান বাংলাদেশের Dec 11, 2025
img
কঠোর হচ্ছে ইউরোপের অভিবাসন নীতি Dec 11, 2025
img

কক্সবাজার-১ আসন

সালাহউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বি হলেন তারই শিক্ষক অধ্যাপক মাইমুল Dec 11, 2025
img

হান্নান মাসউদ

ইউনূস স্যারকে দিয়ে হাতিয়ার ব্লকবাঁধের জন্য ২১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়েছি Dec 11, 2025
img
বাংলাদেশের বাজেটের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় ঋণের সুদ পরিশোধে : বিডা চেয়ারম্যান Dec 11, 2025
img
১২ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা ডিএমটিসিএলের কর্মচারীদের Dec 11, 2025
img
অর্থ পাচারের বিষয়ে সায়মন ওভারসীজের কাছে ব্যাখ্যা চাইল মন্ত্রণালয় Dec 11, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা শোয়াইব হোসেন আটক Dec 11, 2025
img
দলে দলে লড়াই নয়, ঐক্যবদ্ধ হয়ে হাতিয়া বদলাই: হান্নান মাসউদ Dec 11, 2025
img
আসন্ন নির্বাচনে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক ভোট হবে : শামা ওবায়েদ Dec 11, 2025
img
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পেলেন আমিরুল Dec 11, 2025
img
গাজা পিস বোর্ডে রাখা হচ্ছে না টনি ব্লেয়ারকে Dec 10, 2025
img

মানবতাবিরোধী অপরাধ

বিদেশি আইনজীবী আনতে চান সালমান ও আনিসুল Dec 10, 2025
img
৭ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি গভীর নলকূপে পড়ে যাওয়া শিশুটি, সরবরাহ করা হচ্ছে অক্সিজেন Dec 10, 2025