শরীরের যেসব অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে করোনা ভাইরাস

চীন জুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনা ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছুই এখনো অজানা, তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে, এই রোগটি পুরো মানব দেহের উপরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

অতীতে ছড়িয়ে পড়া সার্স এবং মার্সের মতো জুনোটিক করোনা ভাইরাসগুলোর প্রকৃতি একই রকম ছিল। এই করোনা ভাইরাসগুলো আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের অঙ্গ সমূহে ভাইরাস দ্বারা প্ররোচিত প্রদাহের সূত্রপাত করতে পারে। এর ফলে বোঝা সম্ভব যে কেন ‘কভিড-১৯’ মহামারীটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। যদিও ‘কভিড-১৯’ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার সার্সের দশ ভাগের এক ভাগ, তবে এই করোনা ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা গত বৃহস্পতিবার ৬০,০০০ ছাড়িয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। যদি এই প্রকোপটি ছড়িয়ে যেতে থাকে তবে এটি কতটা ক্ষতিকর হতে পারে তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় মহামারী বিশেষজ্ঞ এ সপ্তাহে সতর্ক করেছিলেন যে, কভিড-১৯ যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তবে তা বিশ্বের ৬০ শতাংশ লোককে সংক্রমণ করতে পারে। বৃহস্পতিবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলেছে যে, নতুন ভাইরাসে ১,৭০০ এরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী আক্রান্ত।

স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, দেহ করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হলে আসলে কী ঘটে? নতুন স্ট্রেনটি সার্স-এর মতো জিনগতভাবে এতটাই কাছাকাছি যে একে সার্স-সিওভি-২ বলা হচ্ছে।

আসুন জেনে নিই, করোনা ভাইরাস দেহের কোন অঙ্গের কতটা ক্ষতি করতে পারে:

ফুসফুস:

বেশিরভাগ রোগীদের ক্ষেত্রে কভিড-১৯ ফুসফুস থেকে শুরু এবং শেষ হয়, কারণ ফ্লুর মতো করোনা ভাইরাসও শ্বাসযন্ত্রের রোগ। এটি সাধারণত ছড়িয়ে পড়ে যখন সংক্রমিত ব্যক্তি কাশি বা হাঁচি দেয়, বাতাসে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস কণা স্পর্শ করলে বা কোন ভাবে দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে ভাইরাস সংক্রমণ করতে পারে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে ফ্লুর মতো লক্ষণ দেখা দেয়, জ্বর এবং কাশি দিয়ে শুরু হতে পারে, যা নিউমোনিয়া বা আরও খারাপ অবস্থায় যায়।

সংক্রমণের প্রথম দিনগুলোতে নোভেল করোনা ভাইরাস দ্রুত মানুষের ফুসফুসের কোষগুলোতে আক্রমণ করে। ফুসফুসের কোষ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত- যেগুলো শ্লেষ্মা তৈরি করে এবং দেখতে চুলের মতো (সিলিয়া) ।

শ্লেষ্মা ফুসফুসের টিস্যুগুলোকে রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করতে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অঙ্গ শুকিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। সিলিয়া কোষগুলো শ্লেষ্মার চারপাশের পরাগ বা ভাইরাসের মতো ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে।

ফ্রেইম্যান ব্যাখ্যা করেছেন যে, সার্স সিলিয়া কোষগুলোকে সংক্রমিত করতে এবং হত্যা করতে পছন্দ করেছিল, যা পরে আস্তে আস্তে রোগীদের এয়ারওয়েজকে ধ্বংসাবশেষ এবং তরল দিয়ে ভরাট করে তোলে। তার ধারণা, নোভেল করোনো ভাইরাসের ক্ষেত্রেও এটি ঘটছে।

রক্ত:

হাইপারেক্টিভ ইমিউন প্রতিক্রিয়ার কারণে করোনা ভাইরাস শরীরের অন্যান্য সিস্টেমেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মার্সে আক্রান্ত ৯২ শতাংশ রোগীর ফুসফুসের বাইরে কমপক্ষে একটি করোনা ভাইরাস প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, তিনটি জুনোটিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে একই রকম ঘটনা দেখা গেছে। যেমন- লিভারের এনজাইম বেড়ে যাওয়া, শ্বেত রক্তকণিকা এবং প্লেটলেট গণনা এবং রক্তচাপ কমে যাওয়া। বিরল ক্ষেত্রে রোগীরা কিডনিতে তীব্র সংক্রমণ এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে ভোগেন।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেলম্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের ভাইরাসবিদ এবং সহযোগী গবেষণা বিজ্ঞানী অ্যাঞ্জেলা রাসমুসেন বলেছেন, তবে ভাইরাসটি নিজেই সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে।

সাইটোকাইনস প্রোটিন ইমিউন সিস্টেম দ্বারা বিপদাশঙ্কা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আমাদের শরীর সংক্রমণের জায়গায় প্রতিরোধক কোষকে নিয়োগ করে। শরীরের বাকী অংশগুলি সংরক্ষণ করার জন্য প্রতিরোধক কোষগুলি তখন আক্রান্ত টিস্যুগুলোকে হত্যা করে। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোন নিয়ম ছাড়াই ফুসফুসে সাইটোকাইন ঢেলে দেয়, তখন আক্রান্ত কোষের সাথে সুস্থ কোষগুলোও অবাধে ধ্বংস হতে থাকে।

রাসমুসেন বলেছেন, “ব্যাপারটি এরকম যে বন্দুক দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে গুলি করার পরিবর্তে আপনি যেন একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছেন। যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন আপনার দেহ কেবল সংক্রমিত কোষগুলোকে লক্ষ্য করে না বরং স্বাস্থ্যকর টিস্যুতেও আক্রমণ করে। এর ফলে রক্তনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

লিভার:

যখন একটি জুনোটিক করোনা ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেম থেকে ছড়িয়ে পড়ে তখন আপনার লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চিকিৎসকরা সার্স, মার্স এবং কভিড-১৯ এর প্রভাবে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছেন। গুরুতর ক্ষেত্রে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি এবং এমনকি লিভারের ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।

একবার ভাইরাসটি আপনার রক্ত প্রবাহে এলে এটি আপনার শরীরের যে কোনও অংশে পৌঁছে যেতে পারে। ফলে করোনা ভাইরাস খুব সহজেই আপনার লিভারে প্রবেশ করতে পারে।

শরীর যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য লিভার বেশ কঠোর পরিশ্রম করে। এর প্রধান কাজ রক্ত থেকে পেট ছাড়ার পরে প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিষাক্ত পদার্থগুলো ছাঁকা এবং শরীরের জন্য ব্যবহারযোগ্য পুষ্টি উপাদান তৈরি করা। এটি পিত্ত তৈরি করে যা আপনার ক্ষুদ্রান্ত্রের মেদকে ভেঙে ফেলতে সহায়তা করে। এছাড়া লিভারে এনজাইম রয়েছে যা শরীরে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে গতি দেয়।

আপনার রক্তে যখন অস্বাভাবিক উচ্চমাত্রায় এনজাইম থাকে, যা সার্স এবং মার্সে আক্রান্ত রোগীদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য, এটি একটি ঝুঁকির লক্ষণ। এর ফলে লিভারে হালকা আঘাত হতে পারে বা এটি আরও মারাত্মক কিছু হতে পারে, এমনকি লিভারের ব্যর্থতাও।

কিডনি:

হ্যাঁ, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে আমাদের অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ কিডনিও মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে যায়। সার্স রোগীদের ছয় শতাংশ এবং মার্স রোগীদের এক চতুর্থাংশ মারাত্মক কিডনির সমস্যায় পড়েছিল। গবেষণা

 

টাইমস/এনজে/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ