নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে, আয়-ব্যয়ের মিল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ

রমজানের পুরো এক মাস স্থিতিশীল থাকার পর আবার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে মুরগির বাজার। ঈদের দুই-তিন দিন আগে হুট করে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লারসহ অন্যান্য মুরগির দাম এখনো কমেনি।এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাজার করতে আসা ক্রেতারা।


মুরগির দাম বাড়লেও আগের মতোই আছে মাংস ও ডিমের দাম। তবে স্বস্তিতে নেই সবজির বাজার। ‘আগুন’ জ্বলছে সেখানে। অধিকাংশ সবজির দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর মালিবাগ ও মধুবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের পরে প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকালে বাজার করতে এসেছেন অনেক ক্রেতা। বিক্রেতাদের সঙ্গে দামাদামি করে কিনছেন শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।

দামাদামি করেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না ক্রেতারা৷ দ্রব্যমূল্যের আকাশছোঁয়া দামের কারণে চাহিদার তুলনায় কম বাজার করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।

এই দুই বাজারের মুরগি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা। এছাড়া সোনালী ৩৬০-৩৮০ টাকা, লেয়ার ৩৫০ টাকা।

রমজানের আগে ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে প্রায় ৩০০ টাকা ছুঁয়েছিল ব্রয়লার মুরগি। একই অবস্থা ছিল সোনালী ও লেয়ার মুরগিরও। তখন নিয়ন্ত্রণহীন এই মুরগির দামে লাগাম টেনে ধরতে মাঠে নামে তদারকি সংস্থাগুলো। মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় মুরগির দাম।

এরপর পুরো রমজান মাস ১৯৫-২১০ টাকায বিক্রি হয় ব্রয়লার মুরগি। কিন্তু ঈদের দুইদিন আগে হঠাৎ করে আবার বেড়ে যায় এই দাম। ঈদের আগের দিন রীতিমতো ৩০০ টাকায় বিক্রি হয় ব্রয়লার মুরগি। এরপর দাম কিছুটা কমলেও এখনো রয়ে গেছে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

মুরগির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে আক্কাস মিয়া নামের এক বিক্রেতা বলেন, ঈদের সময় চাহিদা অনেক বেশি ছিল। জোগান ছিল কম। তাই দামও বেড়েছে। এখন আবার দাম কমছে। তিন-চার দিনের মধ্যে দাম আবার কমবে।

বিক্রেতাদের এই অজুহাতে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। মুরগির দাম বাড়ার পেছনে বিক্রেতাদের কারসাজিকে দুষছেন তারা।

ইকবাল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদের সময় মাছ-মাংসের চাহিদা থাকে। মানুষ একটু ভালো মন্দ খায়। এই সময় ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা শুধু ঈদ নয়, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও যে কোনো উৎসবের সময়ই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়৷ এটা তাদের সিন্ডিকেট।

মুরগির দাম বাড়লেও আগের মতোই আছে মাংস ও ডিমের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসি ১১০০ টাকা ও ছাগল ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি লাল ডিম ৪৩ টাকা, সাদা ডিম ৪০ টাকা ও হাসের ডিম ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে আগুন জ্বলছে সবজির বাজারে। মালিবাগ ও মধুবাগ বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা আম ৭০-৮০ টাকা, মারফা ৯০ টাকা, ক্যাপসিক্যাম ২৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, গাজর ৮০-৯০ টাকা, কাকরোল ১০০-১১০ টাকা, কচুরমুখী ১৫০-১৬০ টাকা, সজনে ডাটা (আঁটি) ৫০-৬০ টাকা, মিষ্টি আলু ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, উস্তা ৬০-৭০ টাকা, করোলা ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, পটল ৬০-৭০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, আলু ৩২ টাকা, লতি ৮০ টাকা, চাল কুমড়া (পিস) ৫০-৬০ টাকা, সসা ৭০-৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, ফুলকপি (পিস) ৫০ টাকা, বাঁধাকপি (পিস) ৫০ টাকা, লাউ (পিস) ৬০, কাঁচা কলা (হালি) ৬০ টাকা, কলম্বো লেবু (হালি) ১০০ টাকা, কাগজি লেবু (হালি) ৪০ টাকা, এলাচি লেবু (হালি) ১০০ টাকা।

স্বস্তি নেই মাছের বাজারেও। প্রতি কেজি বোয়াল মাছ ৮০০ টাকা, পাবদা ৫০০ টাকা, টেংড়া ৭০০ টাকা, পুঁটি ৮০০ টাকা, ফলি মাছ ৭০০ টাকা, বাতাসী ৬০০-৮০০ টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা, বাইলা ৮০০ টাকা, বাটা ৫০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, শিং ৪০০ টাকা, রুই ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতল ৩৫০-৪০০ টাকা, রূপচাঁদা ১৪০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৭০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১০০০ টাকা, পোয়া ৮০০ টাকা, তপসী ৭০০ টাকা, মলা ৬০০ টাকা, চাপিলা ৮০০ টাকা, ইলিশ ১৬০০-২০০০ টাকা। , কাচকি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের এমন আকাশছোঁয়া দামের কারণ জানতে চাইলে মালিবাগ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রুবেল আহমেদ বলেন, এই সিজনে নদ-নদীতে পানি কম থাকায় মাছের সরবরাহ কম থাকে, তাই দাম বেশি হয়। এছাড়া মালিবাগ বাজারে তাজা ও নদ নদীর মাছ বেশি বিক্রি হয়। তাই অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে দাম বেশি। যেসব জায়গায় চাষের মাছ বিক্রি হয়, সেসব জায়গায় দাম কম।

এদিকে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭৪ টাকা, নাজিরশাইল ৮০-৮৫ টাকা, আটাশ ৬০ টাকা, পাইজাম ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, দেশি রসুন ১৬০ টাকা, চায়না রসুন ১৪০ টাকা, মিয়নমারের আদা ২০০ টাকা।

অন্যদিকে, নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজার করতে ঘাম ছুটছে ক্রেতাদের। তমিজ উদ্দিন মৃধা নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম তাতে বাজার করতে এলে হিমশিম খেতে হয়। এক কেজির জায়গায় হাফ কেজি কিনতে হয়। এভাবে চলতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের থাকলে না খেয়েও থাকতে হতে পারে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ট্রাম্পের কাছে তথ্যচিত্রের জন্য ক্ষমা চেয়েছে বিবিসি Nov 14, 2025
img
কুড়িগ্রামের নতুন ডিসি অন্নপূর্ণা দেবনাথ Nov 14, 2025
img
পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা বাড়ছে, তাপমাত্রা নামল ১৪ ডিগ্রিতে Nov 14, 2025
img
গাজায় ধ্বংস প্রায় ৩ লাখ বাড়ি, শীতে তাঁবুতেই আশ্রয় নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা Nov 14, 2025
img
রাজধানীতে হালকা শীতের আমেজ, সকাল শুরু ১৯ ডিগ্রি তাপমাত্রায় Nov 14, 2025
img
ডিএসইর বাজার মূলধন কমল আরও ১৭ হাজার কোটি টাকা Nov 14, 2025
img
বরিশালে নতুন বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি নিয়োগ Nov 14, 2025
img
সাতক্ষীরায় ২ চোরাই মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার ৩ Nov 14, 2025
img
প্রয়োজন ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে ৯ কোটি টাকার সেতু Nov 14, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন আজ দেশে কত দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ Nov 14, 2025
img
রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা ছাড়া ভালো নির্বাচন সম্ভব নয় : আনোয়ারুল Nov 14, 2025
img
চীনে উদ্বোধনের পরই ভেঙে পড়ল সেতু Nov 14, 2025
img
তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে শান্তি ও সমৃদ্ধির: আবু সুফিয়ান Nov 14, 2025
img
শুকনা খাবারে লবণ বেশি হলে কী করবেন Nov 14, 2025
img
রাঙ্গুনিয়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে শ্রমিকদল নেতার মৃত্যু Nov 14, 2025
img
দিল্লি সফরে যাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান Nov 14, 2025
img
সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১,৯২৩ জন Nov 14, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Nov 14, 2025
মোস্ট ওয়ান্টেড থেকে হোয়াইট হাউস: শারার ঐতিহাসিক সফর Nov 14, 2025
ভারত চীনের সীমান্তে লাদাখে নতুন সামরিক বিমানঘাঁটি উদ্বোধন Nov 14, 2025