ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ

আজ ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়।

এই দিন আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তৎকালীন পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি জাতি।

প্রতিবছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। ঐতিহাসিক এ দিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। এ ছাড়াও এদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু, সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ছয় দফা উত্থাপন করেন। এ নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন খবরের কাগজে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলে চিহ্নিত করা হয়। পরে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু ১৩ মার্চ ছয় দফা এবং এ ব্যাপারে দলের অন্যান্য বিস্তারিত কর্মসূচি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে অনুমোদন করিয়ে নেন।

ছয় দফার মূল বক্তব্য ছিল, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সব ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর, শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ছয় দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেওয়া হবে।

এদিকে, ছয় দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমগ্র পূর্ববাংলা সফর করেন এবং ছয় দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে অভিহিত করেন। ফলে, শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে ছয় দফার পক্ষে প্রচারকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন।

ছয় দফা দাবি আদায় প্রসঙ্গে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে। ছয় দফা দাবি যখন তারা দেশের কাছে পেশ করেছে তখনই প্রস্তুত হয়ে গিয়াছে যে, তাদের দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে। এটা ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম নয়, জনগণকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নিঃস্বার্থ কর্মীরা, তাদের সঙ্গে আছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিক নেতা, যারা সত্যই শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে তারাও নিশ্চয়ই সক্রিয় সমর্থন দেবে। এত গ্রেপ্তার করেও এদের দমাইয়া দিতে পারে নাই।’ পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ছয় দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়। এ দাবির সপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিজয়ী করে।

অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর দলকে জনগণ বিজয়ী করলেও স্বৈরাচারী পাকিস্তানের শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে আবারও বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক বলেন, ছয় দফাই এনে দিয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এতই প্রখর ছিল যে, তিনি ছয় দফাকে এক দফা দাবিতে পরিণত করে বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলনের ডাক দেন।



Share this news on:

সর্বশেষ

img
নরসিংদীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে বিএনপি নেতা বহিষ্কার Jul 09, 2025
img
বাহাত্তরের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করেছিল : নাহিদ Jul 09, 2025
img
হবিগঞ্জ সীমান্তে ৮ বাংলাদেশিকে পুশ-ইন বিএসএফের Jul 09, 2025
img
ফেনীর দুই উপজেলায় ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম Jul 09, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে অনুমোদনহীন ১৮৩৬ লিটার জ্বালানি তেল জব্দ Jul 09, 2025
img
আমাদের দলটা জুনিয়র এখনও, আমরা পজিটিভ থাকার চেষ্টা করছি : হারের পরে মিরাজ Jul 08, 2025
img
ঢাকা বিমানবন্দরে ৮৯৬ গ্রাম সোনাসহ আটক ২ Jul 08, 2025
img
পন্তকে ভারতের শহীদ আফ্রিদি বললেন সাবেক অধিনায়ক মুশতাক মোহাম্মদ Jul 08, 2025
img
সাংবাদিকদের ধমক দেবেন, এটা সভ্য রাজনীতির কথা নয় : ডা. জাহিদ Jul 08, 2025
img
বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে এনসিপি : নাহিদ Jul 08, 2025
img
নাগার্জুনার সঙ্গে ‘কুলি’তে পর্দা শেয়ার করবেন না আমির খান! Jul 08, 2025
img
সাই পল্লবীকে সীতা চরিত্রে নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে Jul 08, 2025
জিএম কাদেরকে মানসিক রোগী বললেন চুন্নু! Jul 08, 2025
img
সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের হামলার কথা স্বীকার করল ইসরাইল! Jul 08, 2025
img
ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৯৯ রানে হারল বাংলাদেশ Jul 08, 2025
img
যিশুর প্রাক্তন সঙ্গিনী নীলাঞ্জনার নতুন সফর: দুই কন্যাকে নিয়েই এবার ‘একলা চলো রে’ Jul 08, 2025
img
৪০ কোটি পারিশ্রমিকে ‘অখণ্ড ২’ নিয়ে ফিরছেন বয়োপাটি শ্রীনু Jul 08, 2025
img
রণবীরের ‘ধুরন্ধর’ ভক্তদের মন কেড়েছে, কোণঠাসা সালমানের ‘গালওয়ান’! Jul 08, 2025
img
জেআরডি টাটা হয়ে ফিরছেন নাসিরউদ্দিন শাহ Jul 08, 2025
img
‘মহানতি’র পর আর জ্বলে উঠেনি কীর্তির ভাগ্যের আলো Jul 08, 2025