৬ কোটি টাকার সেতুতে উঠতে হয় মই বেয়ে

কুমিল্লার তিতাসে দড়িমাছিমপুর মোল্লা বাড়ি খালের উপর ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর উভয়পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না সেতুটি। একপাশে প্রায় ১৪ ফুট এবং অপরপাশে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যরে মই বেয়ে সেতুতে উঠতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে উঠতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, দড়িমাছিমপুর ও কলাকান্দি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেতুর পূর্ব-পশ্চিম পাশে দুটি বাঁশের মই দেওয়া রয়েছে। পশ্চিম পাশে প্রায় ১৪ ফুট উচ্চতায় ও পূর্ব পাশে ১৮ ফুটের মতো উচ্চতায় দেওয়া রয়েছে বাঁশের মই। এলাকার মানুষ মই দিয়ে সেতুর উপর দিয়ে এবং সেতুর নিচ দিয়ে পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করছেন। সেতুর কোনো পাশেই সংযোগ সড়ক নেই। সড়ক না থাকার পরও এই সেতু নির্মাণকে সরকারি টাকার অপচয় বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। একই খালের উপর নির্মাণ হওয়া সেতুর প্রায় ৭০০ মিটার দক্ষিণে মাছিমপুর-কলাকান্দি সড়কে আরেকটি সেতু রয়েছে। ঔ সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যানবাহন চলাচলের সময় নড়াচড়া করে।

উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, কলাকান্দি ইউনিয়নের দড়িমাছিমপুর ও কলাকান্দি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য দড়িমাছিমপুর মোল্লা বাড়ি খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। জয়েন্ট ভেঞ্চারে পিসি ও এমআইআইআর এবং এমএসটি নামক তিনটি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার পায়। ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্তির নির্ধারিত সময় ছিল ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।

দড়িমাছিমপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির বলেন, মই দিয়ে সেতু পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আমার পা ভেঙে গিয়েছিল। দুই মাস বিছানায় ছিলাম, অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় হলেও সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বিকল্প সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় কেউ যাতায়াত করতে পারছে না। আমাদের গ্রামে কোনো পাকা সড়ক নেই। আমাদের পাশের গ্রামের পূর্বপাশে চার গ্রামেও নেই কোনো পাকা সড়ক। তার পরও এত টাকা ব্যয়ে এই সেতু কেন নির্মাণ হয়েছে আমরা বুঝতে পারছি না।

ইসমাইল মিয়া জানান, এই সেতু নির্মাণে কষ্ট বেড়েছে। কারণ সেতুতে উঠতে হয় মই দিয়ে। মই বেয়ে উঠতে পারেন না তিনি। তাই অনেক ঘুরে আত্মীয়দের বাড়িতে যেতে হচ্ছে।
কলাকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, সেতুর আশপাশের গ্রামে নেই কোনো পাকা সড়ক। তার পরও সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, বোধগম্য নয় তাঁর। রাস্তা ছাড়া সেতু নির্মাণ করা সরকারি টাকা অপচয় আর কী!

কলাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম সরকার বলেন, ৬ কোটি টাকার এই অতি উঁচু সেতু জনগণের কোনো কাজে আসবে না; যদি প্রয়োজনীয় মাটি ভরাট করে সড়কের উচ্চতা বৃদ্ধি ও পাকাকরণ করা না হয়। আর সড়ক না হলে এটি প্রদর্শনী বস্তু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, দুই পাশে বিকল্প সড়কের নির্মাণকাজ দ্রুতই শুরু হবে। সংযোগ সড়কের দুই পাশে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন পেলে কাজটি শুরু করা হবে। দুই পাশে সড়ক নেই এটা সত্য, আগে সেতু নির্মাণ হোক তার পরে এসব কাঁচা সড়ক পাকা করানোর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে।

আরএইচ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, জরিমানা দেড় লাখ টাকা Mar 17, 2025
img
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা সেচপাম্প চালানোর অনুরোধ Mar 17, 2025
img
বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত যুবক Mar 17, 2025
img
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৩৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার Mar 17, 2025
img
হঠাৎ বন্ধ বাংলাদেশিদের ওমরা ভিসা, কারণ জানে না এজেন্সি ও মন্ত্রণালয় Mar 17, 2025
img
গাড়িতে জব্দ সেই ৩৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা Mar 17, 2025
img
‘বিনোদিনী’ চরিত্র নিয়ে রুক্মিণীর সঙ্গে তুলনা, ক্ষোভ প্রকাশ শুভশ্রীর Mar 17, 2025
img
ঐকমত্য কমিশনের কাছে এনআইডি রাখাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব ইসির Mar 17, 2025
img
‘নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার’ Mar 17, 2025
img
সড়কে প্রাণ গেল মাদরাসা শিক্ষকের Mar 17, 2025