সাকিব আল হাসান, মাঠে অসাধারণ সাফল্যের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে মাঠের বাইরে, বিশেষ করে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে তাকে নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। তবে এক ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে সাকিব স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন কেন রাজনীতিতে এসেছিলেন, কী ছিল তার উদ্দেশ্য, এবং সেই সিদ্ধান্তকে তিনি এখনও সঠিক মনে করেন কিনা।
সাকিব বলেন, "যদি আমার রাজনীতিতে আসা ভুল হয়, তাহলে দেশের অন্য কোনো পেশার মানুষ—হোক সে ডাক্তার, ব্যারিস্টার বা ব্যবসায়ী—তাদের ক্ষেত্রেও সেটা ভুল হিসেবে বিবেচিত হবে। অথচ রাজনীতি করা প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। ভোটাররাই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে চাইবে। আমি মনে করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম, আর এখনো মনে করি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ, আমার লক্ষ্য ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কিছু করা।"
তিনি বিশ্বাস করেন, মাগুরার মানুষ তাকে চেয়েছিল এবং সেখানে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
"আমি বিশ্বাস করি, আমার এলাকায় আজও নির্বাচন হলে, আমার বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন," বলেন সাকিব।
রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার মূল কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, "বড় কোনো পরিবর্তন আনতে হলে সিস্টেমের ভেতরে যেতে হয়। বাইরে থেকে পরিবর্তন আনা কঠিন। দেশের যাঁরা আজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারাও তো একসময় এই সিস্টেমের অংশ হয়েই তা করতে পেরেছেন। তাই আমার চিন্তাটা খুব পরিষ্কার—ধীরে ধীরে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম।"
তবে তিনি স্বীকার করেন, সময় ও বাস্তবতা তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ দেয়নি। "নির্বাচনের পর মাগুরায় গিয়েছিলাম মাত্র তিন দিন। তারপর টানা ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। দেশের বাইরে ছিলাম অনেকটা সময়। রাজনীতি বা এলাকার পরিস্থিতি বোঝার মতো সুযোগই পাইনি," বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে সাকিব জানান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছিলেন রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার দরকার নেই, বরং ক্রিকেটেই মনোযোগ দিতে। সাকিব বলেন, "আমি সেই পরামর্শই মেনে চলেছি। কোনো গোপন উদ্দেশ্য ছিল না। চাইলে রাজনীতিতে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে যেতে পারতাম, কিন্তু আমি তা করিনি। আমার পরিকল্পনা ছিল—চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠে নামা।"
সমালোচকদের উদ্দেশে সাকিব বলেন, "যারা বলছেন আমি ভুল করেছি, তারা অনেকেই মাগুরার ভোটার নন। মাগুরার মানুষ জানে আমি কী করতে পারি। তাদের বিশ্বাসই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।"
তিনি আরও বলেন, "ভবিষ্যতে যে-ই ক্ষমতায় আসুক, তারা চিরস্থায়ী নয়। তাই পরিবর্তনের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম কেবল মাগুরার মানুষের জন্য। কোনো ব্যক্তি স্বার্থে নয়। আমার লক্ষ্য ছিল একদম পরিষ্কার।"
সব মিলিয়ে সাকিবের বক্তব্যে উঠে এসেছে, তার রাজনীতিতে আসাটা ছিল ভেবেচিন্তে নেওয়া সিদ্ধান্ত—জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করার চেষ্টা নয় বরং দীর্ঘমেয়াদে মানুষের জন্য কিছু করার আন্তরিক ইচ্ছা থেকেই নেওয়া এক পদক্ষেপ। তবে সময় ও পরিস্থিতির কারণে সে পথটা আপাতত স্থগিত।
এসএম/টিএ