সাভারে শ্রমের হাটে মন্দা, বিপাকে শ্রমিকেরা

পূর্ব আকাশে তখনো সূর্যের ঝাপসা আলো। ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙে শ্রমজীবী মানুষের ডাকাডাকি শুরু হয়। তাদের চোখে-মুখে স্পষ্ট অনিশ্চয়তা আর অসহায়ত্বের ছাপ। ভাগ্যকে সঙ্গী করে কাস্তে-কোদাল হাতে জড়ো হন শতাধিক শ্রমিক। কিছু সময়ের মধ্যেই তাদের হাঁকডাকে প্রাণ ফিরে পায় চারপাশ।

ক্রেতারা আসেন এবং দরদাম করে নিয়ে যান তাদের, বলছিলাম সাভারে বাজার বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিক হাটের কথা। যেখানে বিক্রি হচ্ছে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে শ্রমের বেচাকেনা। প্রতিদিন শ্রমজীবিরা এসে জড় হন এবং দরকষাকষির মাধ্যমে বিক্রি হয় মানুষের শ্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচামুখী লেনে সাভারের সিটি সেন্টারের সামনে বসে এই শ্রমজীবী মানুষের হাট। হাটে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ টাকার বিনিময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে। দক্ষিণ ও উত্তর অঞ্চলের মানুষসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষ শ্রমজীবী এ মানুষের হাটে আসে কাজের জন্য।

তবে ভালো নেই শ্রম বিক্রেতারা। শ্রম বিক্রি করতে আসা শ্রমিকদের তুলনায় শ্রমের ক্রেতা কম হওয়ায় বিপাকে শ্রমিকরা। তুলনামূলকভাবে কাজ কম ও নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক না থাকায় শ্রমিকদের আয়ের গতি স্থির নয়। তাই শ্রমিকদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।

পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী শেফালী বেগম। তিনি বলেন, মাসে ১০/১৫ দিনের বেশি কাজ পাওয়া যায় না। এখন পরিবারের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আছে। বাড়িওয়ালা অসুস্থ হয়ে বাসায়। আগে আমরা আড়াই টাকা রোজে কাজ করে হাট বাজার করে ভালো ছিলাম। এখন চালের দাম বেশি, পেঁয়াজের দাম বেশি, তেলের দামি বেশি। এখন অনেক কষ্টে চলতে হয়। হাট বাজার করতে গেলে হাতে কোনো টাকা-পয়সা থাকে না। বাসা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অনেক খরচ থাকে বলে ক্ষোভের কথা জানান।

অপর শ্রমিক আকবর হোসেন বলেন, আমাদের এখানে শ্রমিকের সংখ্যা বেশি কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কম। তাই সবদিন কাজ পাই না। অনেক কষ্টে অভাব অনটনের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। এখন সরকারি অনেক কন্টেক্টারের কাজ বন্ধ আছে, তাই তুলনামূলকভাবে কাজ কম বলে জানান তিনি।

তবে শ্রমিক দুঃখ লাঘবে বিভিন্ন পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল আহসান রাশেদ । তিনি বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত ও শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করতে হবে। যাতে শ্রমিকদের পরিবার চিকিৎসা সেবা ও তাদের সন্তানেরা শিক্ষার সুযোগ পায়। এছাড়া শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনি সহায়তারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানান তিনি।

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুলাইয়ে শহীদ হতে না পারাটা আমার জন্য আফসোস: আসিফ মাহমুদ Jul 05, 2025
img
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন দেশে ফিরেছেন, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে : আসিফ নজরুল Jul 05, 2025
img
সকালের মধ্যে দেশের ৭ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস Jul 05, 2025
img
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে : নাহিদ ইসলাম Jul 05, 2025
img
এনসিপির কর্মসূচি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনে একটি নতুন রাজনীতির সূচনা: প্রেস সচিব Jul 05, 2025
img
সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করলে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করা হবে: আখতার Jul 05, 2025
img
এজবাস্টনে বড় লিড নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করল ভারত, চাপে ইংল্যান্ড Jul 05, 2025
img
৬ ঘণ্টা পর খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক Jul 05, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ মোটরসাইকেল আরোহীর Jul 05, 2025
img
হাসারাঙ্গাকে সামলানোর নতুন কৌশল খুঁজে পেল বাংলাদেশ! Jul 05, 2025
img
সংস্কার শেষে এই সংবিধানের অধীনেই দেশ চলবে: রিজভী Jul 04, 2025
img
আওয়ামী লীগ শুধু হিন্দুদের ব্যবহার করেছে মাত্র: আযম খান Jul 04, 2025
img
আগস্টে তুরস্কের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ নারী দল! Jul 04, 2025
img
ধূমপানের দৃশ্য নয়, নীতির কাছে আপসহীন অভিনেত্রী রাশমিকা! Jul 04, 2025
img
খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক তুলে নিল রাজস্ব বোর্ড Jul 04, 2025
img
বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে, ক্ষমতার রাজনীতি করে না: ওবায়দুর রহমান চন্দন Jul 04, 2025
img
‘রামায়ণ’ হতে যাচ্ছে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা Jul 04, 2025
img
দেশে টানা ৫ দিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস Jul 04, 2025
১০ মিনিটে সারাদিনের দেশের আলোচিত সব খবর Jul 04, 2025
img
সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে না পারা : শিবির সভাপতি Jul 04, 2025