নীরবতা—অনেকের কাছেই শব্দটির মানে একাকিত্ব, অস্বস্তি কিংবা শূন্যতা। কেউ সারাদিন টিভি চালিয়ে রাখেন, কেউ আবার ঘুমাতেও যান হেডফোনে গান শুনে। কিন্তু গবেষণা বলছে, নীরবতাই হতে পারে শরীর ও মনের জন্য গভীর আরামদায়ক ও উপকারী এক অভিজ্ঞতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নীরবতার সঠিক চর্চা শরীরকে শান্ত করে, মনকে পরিষ্কার করে, এমনকি কমায় হৃদস্পন্দনের গতিও। তবে এর সবটাই নির্ভর করে—নীরবতা আমরা কীভাবে গ্রহণ করছি তার ওপর।
নীরবতা: শান্তি না অস্বস্তি?
ইতালির রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর নিউরোসায়েন্স, এডুকেশন অ্যান্ড ডিড্যাকটিক্স-এর স্নায়ুবিজ্ঞানী ডা. টাল ডটান বেন-সোসান জানান, নীরবতার অভিজ্ঞতা ব্যক্তি-ভেদে ভিন্ন। কেউ যদি ছোটবেলায় শাস্তির অংশ হিসেবে নীরব থাকতে বাধ্য হতেন, তার কাছে এটি মানসিক চাপের সমান। আবার কারও বেড়ে ওঠা যদি হয় প্রকৃতির নীরবতায়, তবে তার কাছে এই নিরবতা এক প্রশান্তির নাম।
নীরবতা কেন প্রয়োজন?
যুক্তরাজ্যের ডারম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. থুই-ভি টি উয়েন বলেন, “নীরবতা আমাদের চিন্তাভাবনাকে সামনে নিয়ে আসে। যারা নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন, তারা এতে আরাম পান। তবে মানসিক অস্থিরতায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এটি অনেক সময় অস্বস্তিরও কারণ হতে পারে।”
অতিরিক্ত শব্দের ক্ষতি
জার্মানির ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স-এর গবেষক ডা. এরিক ফাইফার জানান, দিনভর শব্দের মধ্যে থাকলে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে মাত্র ৬.৫ মিনিট নীরবতা হৃদস্পন্দন কমিয়ে শরীরকে শান্ত করতে পারে।”
কেমন করে উপভোগ করবেন নীরবতা?
যারা নীরবতায় অভ্যস্ত নন, তাদের জন্য এটি প্রথমে অস্বস্তিকর মনে হতেই পারে। তবে ধীরে ধীরে চর্চার মাধ্যমে এটি উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:
স্মৃতির ভেতর শান্তি খুঁজুন: জীবনে কোনো নিরব, প্রশান্ত মুহূর্ত মনে করুন। সেটা গ্রামের সন্ধ্যা, কিংবা একা চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার মুহূর্ত হতে পারে। এই স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দিন নিজেকে।
ছোট করে শুরু করুন: হাঁটার সময় পডকাস্ট বন্ধ করে ৩০ সেকেন্ড নীরব থাকুন। সময় বাড়াতে থাকুন ধীরে ধীরে।
অভ্যাস বদলান স্থান বদলে: যেখানে আপনি সবসময় ফোন ঘাঁটেন, সেখানে নীরবতা চর্চা কঠিন। তাই নতুন স্থান বেছে নিন—যেমন বারান্দা বা ছাদ।
নিজেকে বোঝার সুযোগ দিন: নীরবতার পর নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন—কেমন লাগল? শান্ত না অস্থির? অনুভূতি মনে রাখুন।
সবাই একভাবে নীরবতা উপভোগ করে না: যারা মানসিক জটিলতায় ভোগেন, তাদের জন্য ধীরে ধীরে উপযুক্ত পন্থায় নীরবতা চর্চা দরকার।
শেষ কথা
নীরবতা মানেই একাকিত্ব নয়। এটি নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর, নিজেকে বোঝার এক মূল্যবান সুযোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু স্বাস্থ্যকর নয়, হতে পারে দিনের সবচেয়ে বিলাসবহুল সময়। চর্চার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই—স্বস্তি পেলেই সেটাই সঠিক পথ।
এসএস