আদালত আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণ করুক : সালাউদ্দিন

বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাহী আদেশে কাউকে নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন করে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণ করুক আদালত। একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপি ৩১ দফায় প্রস্তাবিত ‘রিকনসিলিয়েশন’ আওয়ামী লীগের জন্য প্রযোজ্য হবে কিনা এমন প্রশ্নে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রিকনসিলিয়েশনের সেরা নজির রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। মূল কথা হচ্ছে, রিকনসিলিয়েশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা আনা। কত লাখ, কত হাজার মানুষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়? তা করতে গেলে তো রাষ্ট্রে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। ভালো হচ্ছে, রিকনসিলিয়েশনের মাধ্যমে সমাধানের দিকে যাওয়া। বিএনপি সেদিকে গেছে, যাতে রাষ্ট্রে শান্তি, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়।’

বিএনপি কেন আনুপাতিক উচ্চকক্ষের বিরোধিতা করছে, সেই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সংবিধানকে গণতান্ত্রিক করতে বিএনপিই সংস্কারের কথা বলেছে। এ অঙ্গীকার এখনও রয়েছে। সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। নিম্নকক্ষে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে যে সংশোধনী আনা হবে, তাতে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে ৯০ শতাংশের বেশি মিল থাকবে। কিন্তু উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতি রাষ্ট্র পরিচালনায় অসুবিধার সৃষ্টি করবে।’

আনুপাতিক নির্বাচনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি চায়, বাংলাদেশে উচ্চকক্ষ কার্যকর হোক। আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। আবার আইন প্রণয়নেও সমস্যা হবে। বিএনপি বাস্তববাদী দল। আনুপাতিক নির্বাচনে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সরকার গঠনে অন্যদের দ্বারস্থ হতে হবে। কোয়ালিশন করতে গেলে অনেক দাবি-দাওয়া মানতে হয়।’

বিচার বিভাগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে না জড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির কারণে বিচার বিভাগকে পক্ষপাতদুষ্ট করে ফেলা হয়। চর্চার মাধ্যমে গণতন্ত্র একটি পর্যায়ে উপনীত হলে তখন হয়তো আর তত্ত্বাবধায়ক প্রয়োজন হবে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারিনি বলেই অনির্বাচিত সরকারের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। অনেকটা ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’। তবে এ নিয়ে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে।’’

পঞ্চম সংশোধনী, একাদশ সংশোধনী সংসদে অনুমোদনের আগেই কার্যকরের দৃষ্টান্ত থাকলে এবার কেন নয়-এমন প্রশ্নে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেণ, ‘একাদশ সংশোধনী জাতীয় ঐকমত্যে সংসদে অনুমোদনের আগে কার্যকর হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে পদে বহাল রেখেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল। কোনো পক্ষই এর বিরোধিতা করেনি। আর পঞ্চম সংশোধনী আগেই কার্যকর হয়েছিল সামরিক আইনের মাধ্যমে। পরে কিন্তু সংসদের অনুমোদন নিতে হয়েছে।’

অনুমোদনের অঙ্গীকার করে এবার সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধনের ঐকমত্যে আসা যায় না কিনা প্রশ্ন ছিল বিএনপির এই নেতার কাছে। তিনি বলেন, ‘এখন তো সংবিধান বিলুপ্ত হয়নি। সরকার, আদালত চলছে সংবিধান অনুযায়ী। তাই রাজনৈতিক ঐকমত্য হলেও পরবর্তী সংসদে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। একাদশ সংশোধনী কতটা সাংবিধানিক ও আইনানুগ– এটা নিয়ে কিন্তু অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এবারও সংসদের বাইরে এগুলো করলে আইনানুগ হবে না।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত হলে নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার প্রস্তাবে বিএনপি কেন বিরোধিতা করছে। এতে কি আওয়ামী লীগ সুবিধা পাবে? জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘পৃথিবীব্যাপী রীতি হলো– দণ্ডিত হওয়ার আগে যে কাউকে নিরপরাধ গণ্য করতে হবে। বাংলাদেশে যদি আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অযোগ্যের বিধান করি, পৃথিবীর কেউ তা সমর্থন করবে না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই বিধান প্রয়োগ করলে বিএনপিই খুশি হতো। বিএনপিই আওয়ামী লীগের বিচারের প্রধান প্রবক্তা। কিন্তু তা আইনের মাধ্যমে, যথাযথভাবে করতে হবে।’

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার আছে কিনা– তা মানুষ ঠিক করবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ যে সুযোগ দিয়েছে, তা কাজে লাগাতে আইন সংশোধন করতে হবে। কিন্তু সরকার আইন সংশোধন থেকে পিছিয়ে এসেছে। বিএনপি আবারও দাবি করছে, আইন সংশোধন করা হোক। আদালত আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণ করুক। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাহী আদেশে কাউকে নিষিদ্ধ করা ঠিক মনে করে না।’

আরএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টানা ব্যর্থতার পর ‘মেট্রো ইন দিনো’ ছবিতে সব আশা অভিনেত্রী সারার! Jul 05, 2025
img
ধোনি-সাক্ষীর বিবাহবার্ষিকী: পথচলার ১৫ বছর পূর্ণ! Jul 05, 2025
img
বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের কাছে বারবার হোঁচট ভারতের Jul 05, 2025
img
জুলাইয়ে শহীদ হতে না পারাটা আমার জন্য আফসোস: আসিফ মাহমুদ Jul 05, 2025
img
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন দেশে ফিরেছেন, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে : আসিফ নজরুল Jul 05, 2025
img
সকালের মধ্যে দেশের ৭ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস Jul 05, 2025
img
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে : নাহিদ ইসলাম Jul 05, 2025
img
এনসিপির কর্মসূচি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনে একটি নতুন রাজনীতির সূচনা: প্রেস সচিব Jul 05, 2025
img
সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করলে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করা হবে: আখতার Jul 05, 2025
img
এজবাস্টনে বড় লিড নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করল ভারত, চাপে ইংল্যান্ড Jul 05, 2025
img
৬ ঘণ্টা পর খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক Jul 05, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ মোটরসাইকেল আরোহীর Jul 05, 2025
img
হাসারাঙ্গাকে সামলানোর নতুন কৌশল খুঁজে পেল বাংলাদেশ! Jul 05, 2025
img
সংস্কার শেষে এই সংবিধানের অধীনেই দেশ চলবে: রিজভী Jul 04, 2025
img
আওয়ামী লীগ শুধু হিন্দুদের ব্যবহার করেছে মাত্র: আযম খান Jul 04, 2025
img
আগস্টে তুরস্কের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ নারী দল! Jul 04, 2025
img
ধূমপানের দৃশ্য নয়, নীতির কাছে আপসহীন অভিনেত্রী রাশমিকা! Jul 04, 2025
img
খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক তুলে নিল রাজস্ব বোর্ড Jul 04, 2025
img
বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে, ক্ষমতার রাজনীতি করে না: ওবায়দুর রহমান চন্দন Jul 04, 2025
img
‘রামায়ণ’ হতে যাচ্ছে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা Jul 04, 2025