চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত: প্রথমবার মানবদেহে সফলভাবে মূত্রথলি প্রতিস্থাপন

সফলভাবে মানবদেহে মূত্রথলি বা ব্লাডার প্রতিস্থাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মানবদেহে সফলভাবে সম্পূর্ণ মূত্রথলি (ব্লাডার) প্রতিস্থাপন করেছেন তারা। গত ৪ মে, ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের রোনাল্ড রেগান ইউসিএলএ মেডিকেল সেন্টারে এই জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। মঙ্গলবার (২১ মে) এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম এএফপি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৪১ বছর বয়সী চার সন্তানের জনক অস্কার লারেইনসার এই চিকিৎসার মাধ্যমে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। এই সফল অস্ত্রোপচারে তিনি এক দাতার কাছ থেকে একটি কিডনি ও একটি সম্পূর্ণ মূত্রথলি গ্রহণ করেন।

আট ঘণ্টাব্যাপী জটিল এই অপারেশন সম্পন্ন করেন ইউসিএলএ মেডিকেল সেন্টারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। কয়েক বছর আগে ক্যান্সারের কারণে তার মূত্রথলির বড় একটি অংশ অপসারণ করতে হয়। পরবর্তীতে কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিলে দুটি কিডনি কেটে বাদ দিতে হয় এবং তিনি সাত বছর ধরে নিয়মিত ডায়ালাইসিসে ছিলেন।

এই অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন ড. নিমা নাসিরি। তিনি জানান, ‘অপারেশনের পরপরই নতুন কিডনি স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাব তৈরি শুরু করে। তাই রোগীর আর ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়নি।’

অপারেশনের ধাপ সম্পর্কে ইউসিএলএ হাসপাতাল জানায়— প্রথমে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়, এরপর নতুন মূত্রথলি শরীরে স্থাপন করা হয় এবং সবশেষে কিডনিকে নতুন মূত্রথলির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।

অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া আরেক সার্জন ড. ইন্দরবীর গিল বলেন, ‘মূত্রথলির চারপাশের রক্তনালীগুলোর গঠন অত্যন্ত জটিল। দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এটি করা সম্ভব ছিল না। তবে আমরা চার বছর ধরে এর প্রস্তুতি নিয়ে সফল হয়েছি।’

এতদিন মূত্রথলি অপসারণের পর রোগীদের অন্ত্রের একটি অংশ দিয়ে কৃত্রিম থলি তৈরি করে দেওয়া হতো, কিংবা স্টোমা ব্যাগ ব্যবহার করতে হতো। এসব পদ্ধতির ফলে রোগীরা নানা জটিলতা ও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকতেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, সম্পূর্ণ মূত্রথলি প্রতিস্থাপন পদ্ধতি ভবিষ্যতে এসব ঝুঁকি কমিয়ে আনার পাশাপাশি, রোগীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বাড়াবে। এই ঐতিহাসিক সাফল্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অবশেষে গেজেটেড হলেন ৪৩তম বিসিএসের ১৬২ জন May 20, 2025
নবীজীর শিক্ষাদানের ৫টি কৌশল | ইসলামিক টিপস May 20, 2025
বিয়ের প্রলোভনে ৭ মাস, আবারো ধরা পড়লেন নোবেল May 20, 2025
গোল্ডেন টেম্পলে হামলাঃ নতুন সংকটে ভারত-পাকিস্তান! May 20, 2025
বিএনপিপন্থি মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি আ. লীগ নেতা! May 20, 2025
img
লুটপাট চূড়ান্ত করতে ইশরাককে মেয়র পদে বসতে দিচ্ছে না : দুদু May 20, 2025
img
নাটোরে আম পাড়া নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ May 20, 2025
img
সাম্য হত্যার বিচার না হলে ঢাকাসহ সারাদেশ অচল করে দেয়া হবে: রাকিব May 20, 2025
মহার্ঘ ভাতা নিয়ে বড় ঘোষণা অর্থ উপদেষ্টার May 20, 2025
img
প্রকাশ্যে এল ‘টগর’-এর প্রথম পোস্টার May 20, 2025
img
বাবরের পাশে দাঁড়ালেন শেহজাদ May 20, 2025
img
সংস্কার ও নির্বাচন মুখোমুখি করা অপরাধ : নজরুল ইসলাম খান May 20, 2025
এক বছরে বেকার বেড়েছে সোয়া তিন লাখ May 20, 2025
img
'স্ত্রীর সঙ্গে মীমাংসার জন্য থানায় গেলে নোবেলকে গ্রেফতার করা হয়' May 20, 2025
img
ইশরাকের শপথ ইস্যুতে রিটের আদেশ বুধবার May 20, 2025
img
‘বিগত ১৬ বছরে একটা গণপ্রস্রাব কর্মসূচির ডাক দিলেই পারতেন’ দুদুর বক্ত্যবের সমালোচনায় সারজিস May 20, 2025
img
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুদক May 20, 2025
img
বাশারের অনুরোধেও ঘোড়া উপহার নেননি সেই মনু মিয়া May 20, 2025
বাবাকে সঙ্গে নিয়ে অনুশীলনে তাসকিন; বাবার সামনেই করলেন একের পর এক বোল্ড! May 20, 2025
img
এমন কথা বলবা না যে কথার দায়িত্ব নিতে পারবা না: দুদু May 20, 2025